শৌচালয়ের জানলা ভেঙে কার্নিশে লাফ! বড়বাজারের আগুন থেকে বেঁচেও আতঙ্কিত ওড়িশার পরিবার
প্রতিদিন | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
অর্ণব আইচ: ‘রাখে হরি, মারে কে?’ এই প্রবাদ সত্যি করেই যেন বড়বাজারের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড থেকে কোনওক্রমে বাঁচলেন ওড়িশা থেকে আসা পরিবারের পাঁচ সদস্য। তবে এক্ষেত্রে নিজেদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বই তাঁদের বাঁচিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মেছুয়াপট্টির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের জেরে প্রবল ধোঁয়ায় নিজেরাই শৌচালয়ের জানলা ভেঙে লাফিয়ে কার্নিশে ঠায় দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলেন। পরে দমকল তাঁদের উদ্ধার করে। কিন্তু এরপরও আতঙ্ক কাটছে না কিছুতেই। নিজেরা প্রাণে বাঁচলেও জিনিসপত্র সব রয়ে গিয়েছে হোটেলের ঘরে। সেসব কোনওক্রমে উদ্ধার করে এখন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ওড়িশার আগরওয়াল পরিবার। এভাবে প্রাণ ফিরে পেয়ে শুধু ভগবানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা।
দুই ছেলে, দুই ভাইপোর পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে। আইপিএল ম্যাচ দেখার খুব ইচ্ছে তাদের। সেই ইচ্ছেপূরণ করতে গত ২৬ এপ্রিল ছেলে আর ভাইপোদের নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন ওড়িশার নেহা ও আকাশ আগরওয়াল। বড়বাজারের মেছুয়া ফলপট্টির সেই ‘অভিশপ্ত’ হোটেলে ওঠেন তাঁরা। পাঁচতলার দুটি ঘরে ছিলেন ৫ জন। কথা ছিল, মঙ্গলবার রাতে ফিরে যাবেন। চেকআউটের সময় হয়ে গিয়েছিল। তাই দুই ছেলে আর এক ভাইপো ঘর ছেড়ে নিচে চলে গিয়েছিল। আরেকটি ঘর ছেড়ে তখন বেরনোর তোড়জোড় করছিলেন নেহা, আকাশ আর এক ভাইপো। এমন সময়েই হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারপাশে হইহুল্লোড় পড়ে যায়। তড়িঘড়ি নেহারাও দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন বাকি তিনজন।
কিন্তু বেরনোর পর তো আরও বিপত্তি! হোটেলের লবি তো কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। বেরনোর তো সব পথ বন্ধ। তখনই উপস্থিত বুদ্ধি খেলে যায় মাথায়। ফের ঘরে ঢুকে গ্রিলহীন শৌচালয়ের জানলাটি ভাঙেন আকাশ। কোনওক্রমে সেখান দিয়ে বেরিয়ে তিনজনই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লাফ দেন কার্নিশে। সেখানে ঠায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। তারপর দমকল বাহিনী এসে উদ্ধার করে তাঁদের। ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে নেহা আগরওয়াল বলছেন, ”ভাইপোদের নিয়ে কলকাতা ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু ফেরার পথে যা হল, চিরকাল মনে থাকবে। এখনও আমাদের লাগেজ রয়ে গিয়েছে হোটেলের ঘরে। কী করে সেসব ফিরে পাব। আজ রাতের ট্রেন। তার আগে ওগুলো ফেরত পেতে চাই।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বড়বাজারের সেই হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের রেশ ছিল বুধবার সকাল পর্যন্তও। জায়গায় জায়গায় পকেট ফায়ার থাকায় তা নেভানোর কাজ চলেছে। হোটেলের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কী থেকে আগুন লাগল, তা এখনও অজানা।