ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে কলকাতায় এক টুকরো ‘সুন্দরবন’, গঙ্গাতীরে বসছে ম্যানগ্রোভ
প্রতিদিন | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
অভিরূপ দাস: আমফানে গাছ পড়েছিল ৫ হাজার। রেমালে উপড়ে গিয়েছিল তিনশো।
প্রতিবছর ৯০-১২০ কিলোমিটার বেগে ঘুর্ণিঝড় এখন গা-সওয়া! তা ঠেকাতে এবার কলকাতার উপকণ্ঠে তৈরি হচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। যেমনটা রয়েছে সুন্দরবনের নেতিধোপানী, ঘোড়ামারা-বুলচেরিতে।
প্রিন্সেপ ঘাট থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু, গঙ্গার তীর বরাবর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে বসানো হচ্ছে ম্যানগ্রোভ গাছ। কতগুলো? কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের দাপট থেকে শহরকে বাঁচাতে কলকাতা গঙ্গাতীরবর্তী অঞ্চলজুড়ে লাগানো হবে কয়েক হাজার ম্যানগ্রোভ। ইতিমধ্যেই সাড়ে সাতশো ম্যানগ্রোভ গাছ বসানো হয়ে গিয়েছে। কলকাতা পুরসভার উদ্ভিদবিদ সর্বাণী রায় জানিয়েছেন, প্রিন্সেপ ঘাট থেকে শুরু করে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পর্যন্ত কয়েকশো ম্যানগ্রোভ লাগানো শুরু করেছে পুরসভা। উদ্ভিদবিদ আশাবাদী, বছরখানেকের মধ্যে ওই গাছগুলি পুরোদস্তুর অরণ্যের আকার নেবে।
কেন লাগানো হচ্ছে ম্যানগ্রোভ? পুরসভার উদ্ভিদবিদ জানিয়েছেন, ম্যানগ্রোভ গাছের শিকড় অত্যন্ত ঘন। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের সময় জল ভেতরে ঢুকে পড়ার ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে বিশেষ এই গাছ। শুধু তাই নয়, ম্যানগ্রোভ ভূমিক্ষয় রোধেও সাহায্য করে। এর আগে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ে দেখা গিয়েছে কয়েকশো কিলোমিটার বেগের হাওয়াকে আটকে দিয়েছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ। যার ফলে অন্যান্য জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেঁচে গিয়েছেন সুন্দরবনের উপকূলের মানুষরা। ম্যানগ্রোভের যত্নও খুব বেশি লাগে না। সর্বাণী রায়ের কথায়, “প্রথমদিকে দিনে দু’বার জল দিতে হচ্ছে। একটু বড় হলে দিনে একবার জল দিলেই হয়। ম্যানগ্রোভ গাছ লবণাক্ত মাটিতে ভালো হয়। গঙ্গার ধারের মাটি তাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করছে।
পরিবেশবিদ স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কলকাতা পুরসভার এ উদ্যোগের জন্য তাদের সাধুবাদ প্রাপ্য। তাঁর কথায়, “বড় বড় গাছ ঝড়ে মাটি থেকে উপড়ে যায়। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ক্ষেত্রে সে শঙ্কা নেই। হাওয়ার জোর যতই তীব্র হোক মাথা নুইয়ে গেলেও ম্যানগ্রোভ উপড়ে যাবে না। হাওয়ার তীব্রতাকেও সে অনেকটা প্রতিরোধ করতে পারে।” পরিবেশবিদের কথায়, ম্যানগ্রোভের গোড়ায় নানাবিধ শৈবাল জন্মায়। তৈরি হয় একটি বিশেষ জীববৈচিত্র। সব মিলিয়ে পরিবেশের ‘ইকো সিস্টেম’ ধরে রাখতেও কাজ দেয় ম্যানগ্রোভ।