• আগুন নেবানোর যন্ত্র বিকল, দমকলের ছাড়পত্রের মেয়াদ ৩ বছর আগে শেষ, এ ভাবেই চলছিল বড়বাজারের হোটেল
    আনন্দবাজার | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • বড়বাজারের হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একাধিক বিচ্যুতি নজরে এল দমকলের। বুধবার ঘটনাস্থলে যান দমকলের ডিজি রণবীর কুমার। তিনি জানান, ওই হোটেলের ‘ফায়ার লাইসেন্স’-এর মেয়াদ শেষ হয়েছিল তিন বছর আগেই। তার পর তা আর নবীকরণ করাননি হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও অগ্নিকাণ্ডের সময় সেটি কাজ করেনি। দমকলের প্রাথমিক অনুমান, আদৌ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না ওই হোটেলে। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় হোটেলে ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ বাজেনি।

    প্রাথমিক তদন্তের পর দমকল মনে করছে যে, আগুনে পুড়ে নয়, ধোঁয়ার কারণে দমবন্ধ হয়েই মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। হোটেলের দোতলায় প্লাইউডের কাজ চলছিল। আর দোতলা থেকেই আগুন এবং ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়া ক্রমশ উপরের দিতে উঠতে থাকায় তিনতলা কিংবা চারতলায় থাকা আবাসিকেরা হোটেলের নীচে নামতে পারেননি। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে যে, কেন উপরের তলাগুলিতে থাকা জানলা দিয়ে ধোঁয়া বেরোতে পারল না। হোটেলটিতে কেন্দ্রীয় বাতানুকূল ব্যবস্থা বা সেন্ট্রাল এসি নেই। তা সত্ত্বেও কেন অধিকাংশ জানলা বন্ধ ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

    হোটেলের বাইরে থেকে দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি জানলা ইট-সিমেন্ট দিয়ে বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কাজের নেপথ্যে কোন কারণ ছিল, প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে এই কাজ করা হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, হোটেলের অন্য একটি অংশে আরও একটি সিঁড়ি রয়েছে। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের সময় শাটার দিয়ে ওই সিঁড়ির প্রবেশপথ বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে যদিও শাটার খুলে দেওয়া হয়।

    স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, আগে হোটেলটি বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দেওয়া হত। সেই সময় দুটো সিঁড়িই ব্যবহার করা হত। পরে শাটার দিয়ে একটি সিঁড়ির রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে প্লাইউড নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছিল বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। হোটেলে এত বেনিয়ম সত্ত্বেও কেন স্থানীয় পুর প্রশাসনের বিষয়টি নজর আসেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যেই হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে দমকল। হোটেলের দুই মালিক পলাতক। তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

    মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মধ্য কলকাতার মেছুয়ার ফলপট্টির ওই হোটেলে আগুন লাগে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, মৃতদের মধ্যে ১৩ জন দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। আর এক জন কার্নিস থেকে পড়ে মারা গিয়েছেন। ইতিমধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে পুলিশ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)