রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণকে ‘সম্মান’ জানিয়ে দিঘার জগন্নাথধামে গেলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিলীপ পৌঁছতেই বিরল রাজনৈতিক সৌজন্যের ছবিও তৈরি হল দিঘায়। তবে বিজেপির জন্য সে ছবি স্বস্তির হল না। জগন্নাথধাম চত্বরে উত্তরীয় পরিয়ে সস্ত্রীক দিলীপকে বরণ করলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। আর মন্দির দর্শন শেষ হওয়ার পর পাশাপাশি বসে গল্পগুজব করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী এবং দিলীপকে। জগন্নাথধাম উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বয়কট করে বুধবারই কাঁথিতে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই কাঁথি পেরিয়েই দিঘা গেলেন দিলীপ। তবে শুভেন্দুর ‘সনাতনী সমাবেশে’ গেলেন না।
মঙ্গলবার রাতেই দিলীপ জানিয়েছিলেন যে, বুধবার সময় পেলে তিনি দিঘার জগন্নাথধামে যাবেন। হাওড়ার শ্যামপুরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বুধবার তাঁর আমন্ত্রণ ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘‘শ্যামপুরের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পরে যদি সময় পাই, তা হলে দিঘা যাব। মুখ্যসচিব চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’’ তবে শেষ পর্যন্ত সেই ‘সময় পাওয়া’ দিলীপের হয়ে উঠবে কি না, তা দুপুর পর্যন্তও স্পষ্ট ছিল না। শ্যামপুরের অনুষ্ঠান থেকে বেরোনোর পরে স্পষ্ট হয় যে তিনি দিঘা যাচ্ছেন।
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির কথায়, ‘‘অক্ষয়তৃতীয়ার দিন একটা শুভ দিন। এই দিনে আমরা পূজার্চনা, ধর্মীয় কর্মসূচিতে যোগ দিয়েই থাকি। এ রকম একটা দিনে দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হচ্ছে। সেখানে আমাকে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। কেন যাব না?’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতার এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে ‘হিন্দু জাগরণে’র প্রয়াসও দেখছেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘অক্ষয়তৃতীয়ার দিনে হিন্দু জাগরণের অনেক কর্মসূচি থাকে। মন্দির প্রতিষ্ঠাও তো হিন্দু জাগরণেরই কাজ।’’ তার পরেই স্বভাবসিদ্ধ রসবোধে দিলীপের মন্তব্য, ‘‘ভগবান আমাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য সাড়ে তিনশো কিলোমিটার চলে এসেছেন। আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য দুশো কিলোমিটার যেতে পারব না!’’
যে ‘দুশো কিলোমিটার’ পথ পাড়ি দিয়ে বুধবার দিঘার জগন্নাথধামে পৌঁছোলেন দিলীপ, সেই ‘দুশো কিলোমিটার’ পথ ফুরোনোর কিছুটা আগেই কাঁথির মাইলফলক দেখা গিয়েছিল। শুভেন্দুর উপস্থিতিতে সেখানে বুধবার যে ‘সনাতনী সমাবেশ’ হয়েছে, তা কার্যত দিঘার জগন্নাথধাম উদ্বোধনের পাল্টা কর্মসূচিই ছিল। কিন্তু দিলীপের কনভয় শুভেন্দুর ‘সনাতনী সমাবেশে’র দিকে বাঁক নেয়নি। কাঁথি পেরিয়ে সোজা চলে গিয়েছে দিঘার জগন্নাথধামের দিকে।
কাঁথিতে কেন থামলেন না? দিলীপ বললেন, ‘‘আমাকে তো সেখানে কেউ আমন্ত্রণ জানাননি। দিঘায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শ্যামপুরেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাই গিয়েছি।’’ দিলীপের যুক্তি, ‘‘অক্ষয়তৃতীয়ায় এ রকম অজস্র অনুষ্ঠান হচ্ছে। সব জায়গায় যাচ্ছি নাকি? যেখানে যেখানে আমন্ত্রণ পেয়েছি, সেখানেই যাচ্ছি।’’
রাতে দিঘাতেই থাকবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ। কারণ যাঁরা জগন্নাথধাম উদ্বোধনের আমন্ত্রিত হয়ে দিঘায় হাজির হয়েছিলেন, দিলীপ পৌঁছোনোর আগেই তাঁদের অধিকাংশ কলকাতার দিকে রওনা দিয়েছিলেন। দিলীপ নিজেও বলেন, ‘‘দিঘার দিকে যেতে যেতেই দেখছি অনেকের গাড়িই আমার পাশ দিয়ে কলকাতার দিকে ফিরছে। তাই পৌঁছে কার কার সঙ্গে দেখা হবে জানি না।’’ দিলীপের কথায়, ‘‘মন্দিরে যাওয়াটা প্রধান উদ্দেশ্য। আগে যাই। ভগবানকে প্রণাম করি। তার পর ঠিক করব থাকব কি না।’’
জগন্নাথধামে দিলীপের যাওয়া বা তাঁর মন্তব্য নিয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, ‘‘কে কী করলেন, কে কী বললেন, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। আমি একজনেরই মন্তব্যের বা কার্যকলাপের বা মিথ্যাচারের জবাব দিই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’