লোকারণ্য আর মহাধুমধাম! দিঘায় খুলে দেওয়া হল জগন্নাথ মন্দিরের দরজা
আনন্দবাজার | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
বুধবার সকাল ১১টা ১০ মিনিট থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে নিমকাঠের তৈরি জগন্নাথের মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। ওই সময়ই ছিল প্রাণপ্রতিষ্ঠার মাহেন্দ্রক্ষণ। ওই ২০ মিনিটের মধ্যে রুদ্ধ দরজার ভিতরে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবায়েত রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে পুরোহিতেরা প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। দেবতার সর্বাঙ্গে কুশ স্পর্শ করানো হয়।
ওই সময়েই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছোন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। নির্দিষ্ট আসনে বসেন। মন্দিরের বাইরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন গায়ক-গায়িকারা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন রাজারহাট গোপালপুরের বিধায়ক অদিতি মুন্সী। অদিতির পরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। দু’টি গান করেন তিনি। দু’টি গানেরই গীতিকার, সুরকার মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। জিতের পরে মঞ্চে ওঠেন সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী।
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পাথরের জগন্নাথেও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন ইসকনের সেবায়েতরা। একই সঙ্গে প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয় রাধাকৃষ্ণের পাথরের মূর্তিতেও। এর পর জগন্নাথের স্নান এবং বস্ত্র পরিধানের প্রক্রিয়া চলে। তার পরে ৫৬ ভোগ অর্পণ করা হয় জগন্নাথের উদ্দেশে। সেখানে নানা পদের সঙ্গে আছে গজা, পেঁড়া, রসগোল্লার মতো মিষ্টিও।
‘অক্ষয়তৃতীয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ’ ছিল দুপুর ৩টে থেকে ৩টে ১০ মিনিট। ওই সময়েই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। জগন্নাথের উদ্দেশে প্রথম সন্ধ্যারতিও করবেন তিনিই।
জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে চাঁদের হাট বসেছিল দিঘায়। দিঘায় পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা চক্রবর্তী, ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেব, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, রূপঙ্কর বাগচী, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত মোহতা, অরিন্দম শীল, লাভলি মৈত্র, অদিতি মুন্সী, দিগন্ত বাগচী-সহ বাংলা বিনোদন দুনিয়ার খ্যাতনামী ব্যক্তিত্বেরা। মন্দির উদ্বোধনের দিন যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য আমন্ত্রিতদের মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
বুধবার সকাল থেকেই সাজ সাজ রব ছিল দিঘায়। জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনকে কেন্দ্র করে সেজে উঠেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এই সৈকতশহর। গোটা শহরকে রঙিন আলোয় মুড়ে ফেলা হয়েছিল।
সমুদ্রসৈকতে বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী মণ্ডপ বেঁধে এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে গোটা প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার চলছে। প্রচুর ভক্তও ভিড় করেছিলেন মন্দিরের চারপাশে। কেউ কেউ আবার এসেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ এবং জগন্নাথদেবের বেশে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তাও মোতায়েন করা হয়েছে মন্দিরচত্বরে। পুলিশ সূত্রে খবর, ৮০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে মন্দিরচত্বরে। পাশের জেলাগুলি থেকেও আনা হয়েছে পুলিশবাহিনী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা সোমবারই পৌঁছে গিয়েছিলেন দিঘায়। মন্দির পরিদর্শন করেন তিনি। মঙ্গলবারও মন্দির চত্বরে উৎসবের মেজাজ ছিল। ধুমধাম করে হয়েছিল মহাযজ্ঞ। সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল যজ্ঞের কাজ। জগন্নাথদেবকে আবাহনের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়ে তা চলে বিকেল পর্যন্ত। পূর্ণাহুতি দেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির গড়ে তোলার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। প্রথমে দিঘা থানার উল্টো দিকে সমুদ্রের ধারে জগন্নাথঘাটের কাছে একটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল নতুন মন্দির নির্মাণের জন্য। পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়।
২০১৯ সালে নিউ দিঘা রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে সমুদ্রতট থেকে প্রায় ৩৬০ মিটার উত্তরে ভগীব্রহ্মপুর মৌজার ২০ একর জায়গা জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের জন্য চিহ্নিত করা হয়। পরে সেই জমি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ হিডকোর হাতে তুলে দেয়। সেখানেই মন্দিরটি তৈরি হয়েছে।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরটি সম্পূর্ণ ভাবেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অনুকরণে তৈরি হয়েছে। এই মন্দিরের নির্মাণশৈলীতে পুরীর মতোই উত্তর ভারতীয় নাগারা স্থাপত্যের অনুসরণে কলিঙ্গ আর্ট স্থাপত্যের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাবে।
এই মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে রাজস্থানের বংশীপাহাড়পুরের বেলেপাথর। রাজস্থান এবং ওড়িশার প্রায় ৪০০ শ্রমিক জগন্নাথদেবের মন্দিরটি নির্মাণ করেছেন। তবে পুরীর মন্দিরে মূল বিগ্রহটি নিমকাঠের হলেও, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পূজিত হবে পাথরের মূর্তি। কাঠের মূর্তি এখানেও থাকছে, যা রথে চড়ে মাসির বাড়িতে যাবে।
দিঘার একটি পুরনো জগন্নাথ মন্দিরকেই জগন্নাথের মাসির বাড়ি হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। রথযাত্রার সময় নবনির্মিত মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা রথে চেপে মাসির বাড়িতে যাবেন। এর জন্য নতুন জগন্নাথ মন্দির থেকে পুরনো জগন্নাথ মন্দির পর্যন্ত রাস্তাটিকে আরও বেশি চওড়া করে সাজানো হয়েছে।