দিঘা সফর ‘ব্যক্তিগত’, দিলীপের জগন্নাথধাম গমন অনুমোদন করে না দল, জানাল বিজেপি, সতীর্থদের কটাক্ষ সমাজমাধ্যমে
আনন্দবাজার | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
দিঘা সফরে গিয়ে দলের অন্দরে আক্রমণের মুখে পড়লেন দিলীপ ঘোষ। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, দু’জনের প্রতিক্রিয়াতেই ধরা পড়েছে অসন্তোষ। দিলীপের নাম না করে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত চলার ধরন নিয়ে মন্তব্য করব না।’’ সুকান্ত স্পষ্ট করে জানালেন, জগন্নাথধামের উদ্বোধনে দিলীপের যাওয়া দল ‘অনুমোদন’ করছে না। রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষনেতাই শুধু নন, ঘটনাপ্রবাহে এসে পড়েছেন দিলীপের সতীর্থরাও। সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরা-সহ অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা প্রাক্তন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।
বুধবার দিঘায় জগন্নাথধামের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের মন্ত্রী, শাসকদলের নেতা-কর্মী, শাসকদলের ‘ঘনিষ্ঠ’ বিশিষ্টজনেরা সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে। বিরোধী শিবিরের নেতাদের মধ্যে একমাত্র গিয়েছিলেন দিলীপ। সঙ্গে স্ত্রী রিঙ্কু। একইদিনে কাঁথিতে ‘সনাতনী সমাবেশ’ করেছেন শুভেন্দু। সেই কর্মসূচির শেষে দিলীপের জগন্নাথধাম যাত্রার প্রসঙ্গ উঠতেই শুভেন্দু বলেন, কারও ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ নিয়ে তিনি কথা বলতে চান না। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘কোনও ব্যক্তি কী করবেন, কী করবেন না, কী বলবেন, কী বলবেন না, সে সবের উত্তর আমি দেব না। আমি একজনেরই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিই, একজনেরই বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য দিই, একজনেরই বক্তব্যের ত্রুটিবিচ্যুতি ধরে দিই, একজনেরই মিথ্যাচারের বিরোধিতা করি। তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর উত্তরদাতার নাম হল শুভেন্দু অধিকারী।’’ এখানেই থামেননি শুবেন্দু। দিলীপের নাম উচ্চারণ না করেও স্পষ্ট কটাক্ষ ছুড়ে দেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত বিষয়, তাঁর মন্তব্য, তাঁর চলার ধরন, তাঁর কাজের ধরন, প্রেম-প্রীতি-ভালবাসা, রাগ-বিরহ-দহন, এসবের উত্তর আমি দিই না। ভবিষ্যতেও দেব না।’’ শুভেন্দুর কথায় স্পষ্ট যে, তিনি বলতে চেয়েছেন, দিলীপকে তিনি ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না।
সুকান্ত বুধবার বিকেলে দিল্লি থেকে ফিরেই গিয়েছিলেন কলকাতার বড়বাজারের মেছুয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে। এলাকার ঘুরে দেখার পর তাঁকে দিলীপের দিঘা সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। সুকান্তও প্রায় শুভেন্দুর সুরে প্রথমেই বলেন, ‘‘দিলীপদা যাবেন কি যাবেন না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’’ তার পরেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি স্পষ্ট করে দেন, দিলীপের দিঘা যাওয়াকে বিজেপি ‘অনুমোদন’ করছে না। সুকান্ত বলেন, ‘‘দল মনে করে, যে ভাবে মুর্শিদাবাদে হিন্দুরা মার খেয়েছে, যে ভাবে মন্দির ভাঙা হয়েছে, বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার পরে ওখানে (দিঘা জগন্নাথধাম) যাওয়া মানে সেগুলোকে অবজ্ঞা করা। তাই দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আমরা কেউ ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাব না। উনি ব্যক্তিগত ভাবে গিয়েছেন।’’ এখানেই না-থেমে সুকান্ত ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে মন্তব্য করেন, ‘‘শুনেছি ওঁর স্ত্রীকেও নাকি ব্যক্তিগত ভাবে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল।’’
বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র সমাজমাধ্যমে দিলীপকে আক্রমণ করে লেখেন, ‘‘একজন ত্যাগী থেকে কী ভাবে ভোগী হতে হয়, তার আদর্শ নিদর্শন আপনি দিলীপবাবু। বাবুল সুপ্রিয় থেকে মুকুল রায়, এঁদের তাড়িয়ে আজ তাঁদের পথ অনুসরণ করছেন।’’ পাশাপাশিই লেখেন, ‘‘কতটা নির্লজ্জ হলে এমন ‘আদর্শবান’ পুরুষ হওয়া যায়, তা চিন্তার বিষয়! বাংলার বিজেপির লজ্জা আপনি।’’ বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপমও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন দিলীপকে কটাক্ষ করে। তিনি লিখেছেন, ‘‘দিলীপদা আপনি সবে বিয়ে করেছেন। এখন আপনার চিল করার সময়। সো জাস্ট চিল...।’’