স্কুলশিক্ষকদের বেতন হল সময়েই, পেলেন ‘চাকরিহারা যোগ্য’-রাও, এখন চিন্তা: ডিসেম্বরের পর কী হবে?
আনন্দবাজার | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে চলতি মাসে কারা বেতন পাবেন, কারা পাবেন না, তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য শিক্ষা দফতর তার পর এই নিয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা না-দেওয়ায় বেতন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেই জট কাটে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবারের দুপুরের মধ্যে অর্থাৎ যথাসময়েই সকল ‘যোগ্য’ শিক্ষকের অ্যাকাউন্টে বেতন প্রবেশ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিথিল হওয়ার পর তাঁদের অধিকাংশ স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে যোগ্য শিক্ষকদের সংগঠনের দাবি, শুধু আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত নয়, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁদের বেতন নিশ্চিত করা হোক। এই বিষয়ে রাজ্য সরকার কী ভাবছে, তা জানতে চেয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ইমেল করছেন বলেও জানিয়েছেন ‘যোগ্য’ শিক্ষকেরা। ‘যোগ্য’ শিক্ষকেরা বেতন পেলেও বেতন পাননি শিক্ষাকর্মী এবং ‘অযোগ্য’ শিক্ষকেরা।
পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর ২০২৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া গত ৩ এপ্রিল বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত বহু স্কুলে শিক্ষকের অভাবে সমস্যা তৈরি হয়। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়, যাঁরা ‘দাগি’ (টেন্টেড) বা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ নন, আপাতত তাঁদের চাকরি বহাল থাক। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্চ জানিয়ে দেয়, যাঁরা ‘দাগি’ নন, তাঁরা স্কুলে যেতে পারবেন। বেতন পাবেন। আগামী ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, তারা চলতি বছরেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করবে। তবে নতুন এই নির্দেশ গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরেও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাটেনি। কারণ, নতুন অর্থবর্ষের প্রথম মাসে কোন শিক্ষকেরা বেতন পাবেন এবং কাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে, সেই ব্যাপারে শিক্ষা দফতরের কোনও বিজ্ঞপ্তি তখনও স্কুলে পৌঁছয়নি। সু্প্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে স্কুল সার্ভিস কমিশন অযোগ্যদের তালিকা শিক্ষা দফতরে পাঠায়। তার পরেই ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’দের তালিকা জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে যায়। রবিবার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (ডিআই) চিঠি পাঠান স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের। সেই নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে, কারা বেতন পাবেন, কারা পাবেন না। ‘অযোগ্য’দের তালিকায় থাকা শিক্ষকেরা যাতে বেতন না পান, সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়। বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী যদি গুগ্ল ফর্ম পূরণ না করে থাকেন, তা হলে অবিলম্বে তাঁকে সেই ফর্ম পূরণ করতে হবে।
এর পরেই কেটে গিয়েছিল জট। এ বার নতুন অর্থবর্ষের প্রথম মাসে বেতন পেলেন ‘যোগ্য’ শিক্ষকেরা। যোগ্য শিক্ষক ঐক্যমঞ্চের আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘বেতন ঢুকছে, কিন্তু আমরা ৬০ বছর পর্যন্ত বেতন নিশ্চিত করতে চাই। এটাই আমাদের লড়াই।’’ আর এক ‘যোগ্য’ শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল জানিয়েছেন, বেতন হচ্ছে, কিন্তু কিছু প্রার্থীর নাম ওঠেনি তালিকায়। তাঁরা বেতন পাননি। মেহবুবের কথায়, ‘‘বেতন পাননি এমন যোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা কয়েকশো। গুগ্ল ফর্ম ভরার পরেও তাঁরা বেতন পাননি।’’ কেন এ রকম হল? এ জন্য মেহবুব এসএসসির দিকে আঙুল তুলেছেন। মেহবুব বলেন, ‘‘এই ভুল এসএসসির। তার ফলে এই সঙ্কট।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, ‘অযোগ্য’দের বেতন হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘এখন ওঁদের (অযোগ্য) নিয়ে কী করবে জানি না। সরকারের সঙ্গে বসতে চাইছি। মেল করব শিক্ষামন্ত্রীকে। সরকার কোন পথে এগোতে চাইছে, জানা দরকার।’’