• বিকাশদের ঘিরে বিক্ষোভ: বামেদের পাল্টা মিছিলে হাঁটলেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা, হাই কোর্ট উত্তপ্ত
    আনন্দবাজার | ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যদের ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনার পর প্রতিবাদ মিছিলে হেঁটেছিলেন বামপন্থী আইনজীবীরা। বুধবার তার পাল্টা মিছিল করল তৃণমূল। উচ্চ আদালতের তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা বিকাশরঞ্জনদের বিরুদ্ধে পাল্টা মিছিলে হেঁটেছেন। শুক্রবারের ঘটনাকে আইনজীবীদের ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। বিচারপতির অবমাননার তীব্র নিন্দাও করেছেন।

    গত শুক্রবার বিকাশরঞ্জনের চেম্বারের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। তার পর তাঁরা সিটি সিভিল আদালতের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখানে বিকাশের দুই জুনিয়র ফিরদৌস শামিম এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্তের চেম্বার রয়েছে। তার নীচে অবস্থান শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। অভিযোগ, আইনজীবীদের জুতো দেখানো হয়। পরে বিকাশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় প্লাস্টিকের জলের বোতল। ফিরদৌস বিক্ষোভকারীদের দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গেও দীর্ঘ ক্ষণ বচসা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

    বিক্ষোভকারীদের অভিযোগের তির ছিল হাই কোর্টের এক বিচারপতির দিকেও। অভিযোগ, বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সঙ্গে বিকাশরঞ্জনের ‘আঁতাঁত’ রয়েছে। তাই তাঁর এজলাসে মামলার অগ্রগতি হচ্ছে না। বিচারপতির বিরুদ্ধেও আপত্তিকর মন্তব্য এবং স্লোগানিংয়ের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, ওই বিচারপতির ছবি মাড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমও এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

    বিচারপতি এবং বিকাশরঞ্জনদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রতিবাদে বামপন্থী আইনজীবীরা হাই কোর্ট চত্বরে একটি মিছিল করেছিলেন। বুধবার তার পাল্টা মিছিলে হেঁটে তৃণমূলপন্থী আইনজীবী বিশ্বব্রত বসু মল্লিক বলেন, ‘‘মুষ্টিমেয় কিছু আইনজীবীর চেম্বারে সে দিন অশান্তি হয়েছিল। কেন হল, তার সদুত্তর মেলেনি। চাকরিপ্রার্থীরা নিশ্চয়ই কোনও কারণে ক্ষুব্ধ। নিশ্চয়ই তাঁদের কোনও কাজ ওঁরা করে দেননি, তাই এই অশান্তি। এটা তো আইনজীবীদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। বার অ্যাসোয়িয়েশনও এর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। বারের অফিসে কোনও চিঠি জমা পড়েনি। এটা আইনজীবী এবং মক্কেলদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ঘটনাটি আসলে ঘটানো হয়েছে। হাই কোর্টে এত আইনজীবী আছেন, কই তাঁরা তো ঘেরাও হলেন না!’’

    আদালত অবমাননা প্রসঙ্গে আইনজীবী বসু মল্লিক আরও বলেন, ‘‘বিচারপতির ছবি পা দিয়ে মাড়ানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি। যাঁরা এটা করিয়েছেন, তাঁদের দিক্কার। কিন্তু সে দিনের ঘটনায় মূলত যে নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ত্রিসীমানায় ছিলেন না। ওই সময়ে তিনি একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন।’’ বিকাশদের কটাক্ষ করে এর পর তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের বিরুদ্ধে এত বিক্ষোভ, তাঁদের উদ্দেশ্যই কিন্তু চাকরি খাওয়া। চাকরি দেওয়া নয়। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ। সে দিন ওই আইনজীবীদের আচরণ আপত্তিকর ছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঁরা অনেক কথা বলেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধেও বলেছেন। অথচ, পুলিশ তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী তো বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য! এগুলো মানা যায় না। আমি মনে করি, প্রধান বিচারপতিকেও ভুলপথে চালিত করা হচ্ছে। আশা করি, এর সমাধান বেরিয়ে আসবে।’’ উল্লেখ্য, বিকাশদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে হাই কোর্ট। তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে। এই বেঞ্চের সদস্যেরা হলেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)