নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বর্ধমান স্টেশন থেকে বেরিয়ে অসুস্থ সন্তানকে কোলে নিয়ে রীতিমতো ছুটে এসে টোটো ধরছিলেন গুসকরার বাসিন্দা শ্যামলী বাউরি। ছেলেকে খোসবাগানে ডাক্তার দেখাতে যাবেন। কিন্তু, আদৌ চিকিৎসকের কাছে নাম লেখানো যাবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। যাত্রীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে রামপুরহাট শাখায় ৮টার আগে বর্ধমানে আসার লোকাল ট্রেনই নেই। সেকারণে নিত্য দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। বর্ধমান-মালদহ টাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনও করোনাকাল থেকে বন্ধ। ফের চালুর দাবিতে সরব হয়েছেন যাত্রীরা।
পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, নতুন বেশকিছু ট্রেন চালু হয়েছে। যাত্রীরা আবেদন জানালে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে বোলপুরে আসে রামপুরহাট-হাওড়া বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার। সেটি বর্ধমানে পৌঁছয় ৮টার পর। তার আগে ভোর সাড়ে ৪টেয় বোলপুর স্টেশনে আসে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। সেটি বোলপুরের পর বর্ধমানে থামে। মাঝে আর কোনও স্টেশনে দাঁড়ায় না। ফলে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারই বীরভূম বিস্তীর্ণ অংশ সহ পূর্ব বর্ধমানের ভেদিয়া, পিচকুড়ির ঢাল, গুসকরা, বনপাস, ঝাপটের ঢাল, নোয়াদার ঢাল সহ বেশকিছু স্টেশনের যাত্রীদের ভরসা। সেকারণে ভোরে হাওড়া, কলকাতা বা বর্ধমানে জরুরি কাজ বা ডাক্তার দেখাতে আসতে পারেন না যাত্রীরা। করোনা পরিস্থিতি থেকে ভোর ৫টার বর্ধমান থেকে মালদহগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনও বন্ধ। সকালের তিনপাহাড় লোকাল ট্রেনটি এখন সকাল ৬টা ২০মিনিটে বর্ধমানে ছাড়ছে। ফলে ভোরে কোনও কাজে বোলপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট সহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারছেন না যাত্রীরা।
গুসকরার যাত্রী দীপঙ্কর বসু বলেন, ভোরে আপ ও ডাউন দু’দিকেই ট্রেন নেই। বর্ধমান বা বোলপুরে যেতে খুব সমস্যা হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে কার্যকরী ব্যবস্থা নিক। ভেদিয়ার বাসিন্দা সাহেব ধাড়া বলেন, বিশ্বভারতীর আগে বর্ধমানে যাওয়ার কোনও ট্রেন নেই। ফলে কোনও দরকারে ভোরে আমরা যেতে পারি না। রোগীদের দেখাতে নিয়ে যেতে খুব সমস্যা হয়। অধিকাংশ ডাক্তারের চেম্বারে ভোর থেকে লাইন বা নাম লেখানো শুরু হয়ে যায়। ডাক্তার দেখিয়ে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। বাসে গাদাগাদি ভিড় হয়। খরচ বেশি হওয়ায় সবাই বাসে যেতেও পারেন না। সকালের আপ তিনপাহাড় প্যাসেঞ্জার অনেকে দেরি করে আসে। অধিকাংশ দিনই গুসকরা ঢোকাতেই সাড়ে ৮টা বেজে যায়। ফলে কোনও দরকারে এখানকার যাত্রীরা ভোরে বোলপুরে যেতে পারেন না। আপ ও ডাউনে সকালে একটি করে লোকাল ট্রেন বাড়ানো দরকার। করোনার আগে চলা সকালের মালদহ টাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি চালু করা হোক। বিশ্বভারতীর আগে রামপুরহাট থেকে বর্ধমান বা বোলপুর থেকে বর্ধমান পর্যন্ত আর একটি ট্রেন দেওয়া দরকার। বীরভূম জেলার বহু বাসিন্দাও ভোরে লোকাল ট্রেনে কলকাতা বা বর্ধমানে যেতে সমস্যায় পড়ছেন। গুসকরার বাসিন্দা বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের এক নার্স বলেন, বর্ধমান-মালদহ টাউন প্যাসেঞ্জারে বোলপুরে গিয়ে সকালে ডিউটি ধরতাম। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় বাসে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছি। ট্রেনটি চালু করা হোক। বর্ধমানের এক বাসিন্দা বলেন, ভোরে মালদহ টাউন প্যাসেঞ্জারে কম খরচে তারাপীঠে যেতাম। ট্রেনটি আবার চালু করা হোক।