নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ‘ব্যাগপত্র এভাবে হাতে ধরে বসে রয়েছেন কেন? বাঙ্কারে তুলে দিন।’ সহজ সরল মহিলা এক অপরিচিত যুবকের কথা শুনে তাই করেছিলেন। কিন্তু তিনি ট্রেন থেকে নেমে যখন নিজের ব্যাগ খুলে দেখলেন, ততক্ষণে তাঁর মাথা ঘুরে গিয়েছে। পরে জানা গেল, যে ব্যাগ তিনি বাঙ্কারে রেখেছিলেন, তাতে লক্ষাধিক টাকার অলঙ্কার ছিল। সব খোয়া গিয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল এক মহিলার সঙ্গে। পুরুলিয়া জিআরপিতে অভিযোগ জমা পড়ার পরই ঘটনার তদন্তে নেমে ছ’জনকে শহরেরই একটি লজ থেকে গ্রেপ্তার করে রেল পুলিস।
পুলিস সূত্রের খবর, এই ধরনের দুষ্কৃতীরা মূলত ‘বাঙ্কার পার্টি’ নামেই পরিচিত। তাদের টার্গেট মূলত চলন্ত দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীরা। ‘সফট টার্গেট’ মহিলারা। চোখের নিমেষে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে মহিলাদের গলার হার, কানের দুল-সহ নানা অলঙ্কার। মোবাইল ফোন, টাকা, ঘড়ি, ব্যাগ-কোনও কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে মিশে দিনের পর দিন এই ধরনের অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে ‘বাঙ্কার পার্টি’। পুলিসের দাবি, এই ধরনের অপরাধীরা মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। পাঁচ-ছ’জনের দলে ভাগ হয়ে এরা ছিনতাই করে। সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে একেবারে মিশে যায়। তারপরেই সুযোগ বুঝে লুটপাট।
রেল পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, জেনারেল কামরায় নীচে যাত্রীরা বসেন, উপরের বাঙ্কারে মালপত্র রাখা থাকে। ভিড় ট্রেনে বাঙ্কারেই যাত্রীরা উঠে বসেন। সেখানেই ঘাপটি মেরে বসে থাকে এইসব দুষ্কৃতী। তারপর সুযোগ বুঝে লুট করে। সেই কারণেই পুলিসের ভাষায় এইসব দুষ্কৃতী ‘বাঙ্কার পার্টি’ বলেই পরিচিত। সাধারণ কামরা ছাড়াও স্লিপার, বাতানকুল কামরাতেও যাতায়াত রয়েছে অপরাধীদের। এরা টিকিট কেটেই ট্রেনে ভ্রমণ করে। যাত্রীদের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে লুট করে। এই ধরনের ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে বলে দাবি পুলিসের।
রেল পুলিসের এক আধিকারিক বলছিলেন, ট্রেনে যাত্রীদের ওঠা, নামার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে গেট জ্যাম করিয়ে দেন এইসব অপরাধী। যাত্রীরা সেই সময় তাড়ায় থাকেন। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগায় অপরাধীরা। বহু ক্ষেত্রে আবার ট্রেনে না উঠেই বাইরে থেকেই জানালার ধারে বসা যাত্রীদের কারও কাছ থেকে সোনার হার, কারও কাছ থেকে মোবাইল, ব্যাগ এবং অন্যান্য দামি জিনিসপত্র ছিনতাই করে। ঘটনায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ট্রেন যাত্রাই যাত্রীদের আরও সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে রেল।
পুলিস জানিয়েছে, এইসব অপরাধী একেবারে আঁটঘাঁট বেঁধেই অপারেশন চালায়। ধরা পড়া মাত্রই হাজির হয়ে যায় উকিল। পুরুলিয়ায় যে ছ’জন দুষ্কৃতী ধরা পড়েছিল, উত্তরপ্রদেশ থেকে উকিল এসেছিল তাদের হয়ে সওয়াল করার জন্য।