• প্যান্ডেলে দীঘার মন্দির উদ্বোধন টিভিতে দেখাল সিপিএম বোর্ড!
    বর্তমান | ০১ মে ২০২৫
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: রাজ্যের একমাত্র বাম পরিচালিত পুরসভা। ভরা ঘাসফুলের যুগেও সিপিএমের সবেধন নীলমণি তাহেরপুর। সেখানেই কিনা রীতিমতো প্যান্ডেল বেঁধে, জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করা হল দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন! তা হলে কি, ভগবত প্রেম আর বাংলার ঐতিহ্যের প্রশ্নে ‘নাস্তিক’ থেকে ‘আস্তিক’-এ উত্তরণ সিপিএমের? সেটাকে আংশিক সমর্থন করেও পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারি নির্দেশিকাকে তো আর অমান্য করা যায় না। 

    রাজ্যে পালাবদলের পর রক্তক্ষরণ অব্যাহত সিপিএম সহ বাম দলগুলির।  নিরবচ্ছিন্ন ৩৪ বছরের শাসনকালে তৈরি হওয়া ভোট ব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ ঝুঁকেছে বিজেপির দিকে। ফল যা হওয়ার তাই। বাম ভোট ভাগাভাগিতে তৃণমূলের দাপট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিধানসভায় সিপিএম শূন্য। এমন সঙ্কট-কালে মান রেখেছে নদীয়ার তাহেরপুর। নর্টিফায়েড এলাকাটি আজও সিপিএমের দখলে। বুধবার সকালে সেই পুরসভার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় দেখানো হল দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। তাহেরপুর প্রশাসনিক ভবনের সামনে রীতিমত প্যান্ডেল বেঁধে বড় স্ক্রিনের টিভি চালিয়ে সম্প্রচার করা হয় গোটা অনুষ্ঠানটি। তৃণমূল সরকারের আধ্যাত্মিক কর্মযজ্ঞে এভাবে বাম পুরসভার সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখে স্বাভাবিকভাবেই ভুরু কুঁচকেছেন এলাকার অনেক সিপিএম নেতাই। নিন্দুকেরাও নানা প্রশ্ন তুলেছেন। উত্তর খুঁজতে পুরভবনে গিয়ে দেখা মিলল নতুন এক সিপিএমের। কমরেডদের মুখে শোনা গেল ভবগত প্রেমের কথা! সেই সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেও বিষয়টিকে মর্যাদা দিচ্ছেন তাঁরা। এমনটাই জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাই জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের সরাসরি সম্প্রচারে দোষের কিছু দেখছে না সিপিএম। বরং অনেকটাই ভগবত প্রেমের প্রতি সহনশীল। পাশাপাশি, সিপিএম নেতারা এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন,  বাম পরিচালিত পুরসভা হলেও তা রাজ্য সরকারের অধীন। দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন সরকারি অনুষ্ঠান। সরকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পুরসভা সেই নির্দেশিকা অমান্য করতে পারে না। রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য যাই থাক, সরকারি নির্দেশ পালন করাই কর্তব্য বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

    তাহেরপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় সিপিএম নেতা উত্তমানন্দ দাস বলেন, ‘রাজ্য সরকারের একটি অংশ পুরসভা। সরকারের নির্দেশিকা পালন করা আমাদের কর্তব্য। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন সরকারি অনুষ্ঠান। সরকারের নির্দেশিকা থাকায় তা আমরা সম্প্রচার করতে বাধ্য। এটা সুস্থ প্রশাসনিক সমন্বয়ের অনন্য উদাহরণ। তাই আমরা প্যান্ডেল খাটিয়ে চেয়ারের ব্যবস্থা করে স্ক্রিন লাগিয়ে দিয়েছি। অনেক লোক আসছেন, বসছেন এবং দেখছেন।’ এরপরেই উত্তমানন্দবাবুর সংযোজন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই বিষয়টি রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের একটা অংশ। জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে দীঘার অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। মানুষ সেখানে যাবেন। ভগবত প্রেমে মেতে উঠবেন। এটা আমরাও চাই। তা ছাড়া রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বাংলার কৃষ্টি-ঐতিহ্যকে লালন করার দায়িত্বও আমাদের সকলের।’ স্বাভাবিকভাবেই সিপিএমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তৃণমুল। দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি সাধুবাদ জানাই তাহেরপুর পুরসভার চেয়ারম্যান এবং পুর বোর্ডের এই সদিচ্ছাকে। রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক, একটি ইতিহাস রচনার অংশীদার তাঁরাও হলেন। তাছাড়া আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তো রাজনৈতিক ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে রেখে সিপিএম-বিজেপির নেতৃত্বদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে। এই মন্দির তৃণমূলের একার নয়, রাজ্যের সব রাজনৈতিক দল থেকে সর্বস্তরের মানুষের।’  টিভিতে দেখানো হচ্ছে মন্দির উদ্বোধন। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)