ঝাড়গ্রামে নিক্ষয় পোষণ যোজনা প্রকল্পে ব্যাপক জোর, কমছে যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার
বর্তমান | ০১ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামে যক্ষ্মায় একসময় বহু মানুষ মারা যেতেন। ২০২২ সালেও জেলায় যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার ছিল ৮ শতাংশ। যক্ষ্মা রোগীদের চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসার ব্যবস্থা ও পুষ্টিকর খাবারের জন্য অর্থ প্রদান মৃত্যুর হারকে কমিয়ে এনেছে। এবার যক্ষ্মা নির্মূল করার লক্ষ্যে ঝাঁপাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, ২০২৫ সালে জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ৪.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। যা বড়সড় সাফল্য বলেই মনে করছি। যক্ষ্মারোগীদের দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়েছে। অতিরিক্ত পুষ্টির যোগান দিতে নিক্ষয় মিত্র কর্মসূচি চলছে। আশাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। বিভিন্ন স্তরে প্রচার চালানো হচ্ছে। যার জেরেই এই সাফল্য মিলেছে। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, মৃত্যুর হার কমলেও, বছরে হাজারের উপর বাসিন্দা এখনও যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত জেলায় ৪৫২জন নতুন যক্ষ্মারোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ২০২২ সালে জেলায় ১৫৮৬জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ১২৭জনের। ২০২৩ সালে ১৮৪৪জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃতের সংখ্যা ছিল ১০৮জন। ২০২৪ সালে আক্রান্ত হন ১৮১৮জন। মারা যান ৮৬জন। চলতি বছরের মার্চ মাসে ৪৫২জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা ৬জন। আগে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের উদ্যোগে যক্ষ্মা আক্রান্তদের চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হতো। এখন জেলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যক্ষ্মার পরীক্ষা করা হচ্ছে। সাতদিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। ব্লকস্তরে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষক টিম গড়ে তোলা হয়েছে। চিকিৎসক থেকে আশাকর্মীরা বিভিন্ন ব্লকের যক্ষ্মারোগীদের উপর নজরদারি চালাচ্ছেন। জেলার ১০০শতাংশ যক্ষ্মারোগীকে নিক্ষয় মিত্র কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। পুষ্টিকর খাবারের জন্য বছরে দু’টি পর্বে দেড় হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, যক্ষ্মা সচেতনতায় পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। যার জেরে প্রত্যন্ত গ্ৰামীণ এলাকায় যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিলে অনেকেই গ্ৰামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে পরীক্ষা করছেন। এই সুবিধা গ্ৰামীণ হাসপাতালে এতদিন পাওয়া যেত না। বিনপুর-২ ব্লকের বাসিন্দা এক যুবক বলেন, যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার পর ভয় পেয়েছিলাম। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। স্থানীয় আশাকর্মীরা নিয়মিত বাড়ি এসে খবর নিতেন। ওষুধ ও খাবার ঠিকঠাক খাচ্ছি কি না, দেখে যেতেন। এখন সুস্থ হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করছি। যক্ষ্মা নিয়ে অবহেলা করতে মানা করছি। ঠিকমতো চিকিৎসা হলে এই রোগ সেরে যায়, সেই কথাও সকলকে বলছি।