• সংস্কার চলছে, এক মাসের মধ্যে পূর্বাবস্থায় ফিরবে কলাভবনের ঐতিহ্যবাহী কালোবাড়ি‌
    বর্তমান | ০১ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্বাবস্থায় ফিরবে বিশ্বভারতীর কলাভবনের কালোবাড়ি। কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি ভগ্নদশায় পড়েছিল। কলাভবনের অধ্যক্ষ পদে যোগদানের পরেই গুরুত্বপূর্ণ এই ঐতিহাসিক বাড়িটির সংস্কারের কাজে মন দেন অধ্যাপক শিশির শাহানা। সামনেই বর্ষাকাল। সে কথা মাথায় রেখে কালোবাড়ি সংস্কারে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের এক মাসের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই জোর কদমে কাজ শুরু হয়েছে বলে কলাভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই খবরে খুশির হওয়া কলাভবন ক্যাম্পাসে। 

    উল্লেখ্য, বিশ্বভারতীর যে ক’টি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য ও ভবন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আচার্য নন্দলাল বসু ও রামকিঙ্কর বেইজ সৃষ্ট কালোবাড়ি। কলাভবনের এই দুই প্রাণপুরুষের যৌথ উদ্যোগে ১৯৩৪ সালে মাটি, আলকাতরা ও অন্যান্য মৌলিক উপাদান দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি তৈরি হয়। মূলত, দক্ষিণ ভারতের কেরল ও কর্ণাটকের দু’টি ভিন্ন মন্দির ও প্যালেস থেকে শিব-পার্বতীর বিয়ের উপাখ্যান ও বিষ্ণুমূর্তি চিত্রিত করা হয়েছে কালোবাড়ির বারান্দায়। এছাড়া বাইরের দেওয়ালে অজন্তা, ইলোরা সহ মিশরীয়, রোমান ও গ্রিক সভ্যতার নিদর্শনও শিল্পকলা আকারে কালোবাড়ির বিভিন্ন দেওয়ালে তুলে ধরার হয়েছে। নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর অন্যান্য ছাত্রাবাসের মতোই কালোবাড়ি ব্যবহৃত হতো। স্নাতকোত্তর স্তরের নির্বাচিত পড়ুয়া এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটিতে আবাসিক হিসেবে থাকার সুযোগ পেতেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ। ফলে, বাড়িটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভগ্নপ্রায় আকার ধারণ করেছিল। তৎপর্যপূর্ণভাবে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পাওয়ার পরেও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যদের আমলে সেভাবে কালোবাড়ি সংস্কার করা হয়নি বলে অভিযোগ। গত এক বছর ধরে সংস্কারের নামে সবুজ চাদরের ঘেরাটোপে রাখা হয়েছিল। এরপর কলাভবন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়ে সংস্কারের কাজ শুরু করে। বিশেষত, কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির শাহানা দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরেই জোর কদমে কালোবাড়ির সংস্কারের কাজ শুরু করেন। এই কাজে পেইন্টিং, স্কাল্পচার ও সেরামিক বিভাগের অধ্যাপক ও পড়ুয়ারা হাত লাগিয়েছেন। 

    কলাভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সংস্কারের কাজে মাটি, ধানের তুষ, বেলের আঠার মতো প্রাকৃতিক উপাদানের পাশাপাশি আলকাতরা ব্যবহার করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বলেন পুরনো ধাঁচের অনুসরণেই প্রায় নিখুঁতভাবে কালোবাড়ির শিল্পকর্ম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। কাজ প্রায় শেষের দিকে। মে মাসের মধ্যেই ঝাঁ চকচকে অবস্থায় কালোবাড়িকে দেখা যাবে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য ও ভাস্কর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তার মধ্যে কালোবাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছিল। পুনরায় আগের মতো রূপ দেওয়ার জন্য কলাভবন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। বাড়ির স্বাস্থ্য অপরিবর্তিত রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার জরুরি। তাই ওই ভবনটিকে কী কাজে ব্যবহার করা হবে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেরিটেজ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)