• খনিতে শ্রমিকদের মৃত্যু রোধে মিথেন পরিমাপের অত্যাধুনিক যন্ত্র আবিষ্কার
    বর্তমান | ০১ মে ২০২৫
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল:  খনি দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ মিথেন। মাটির হাজার হাজার ফুট নীচে কয়লা কাটতে গিয়ে মিথেন গ্যাসে প্রাণ গিয়েছে শ’য়ে শ’য়ে খনি শ্রমিকের। এবার সেই বিষয়টি মাথায় রেখে খনিতে মিথেন গ্যাসের পরিমাপ করার আধুনিক ডিভাইস তৈরি করল কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনিং ডিপার্টমেন্ট। ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ (আ‌ইওটি) ও ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ (এআই) প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই ডিভাইসটি তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, ডিভাইসটি বর্তমান সময়ের মিথেন গ্যাসের মাত্রা যাচাই করার পাশাপাশি পরবর্তী আট ঘণ্টায় খনিতে মিথেনের পরিমাণ কত হবে তার পূর্বাভাস দিতে পারবে। সেই পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য খনির নীচে নামতে হবে না। ‘ইন্টারনেট অব থিংস’-এর সাহায্যে খনির কন্ট্রোল রুমেই সেই বার্তা পৌঁছে দেবে ডিভাইস। মিথেনের মাত্রা বেড়ে গেলে বাজবে অ্যালার্মও। 

    ‘মিথেন গ্যাস সেনসিং ডিভাইস ইন আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনস’ নামের প্রজেক্টটি কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তবায়িত করতে দায়িত্ব দেয়। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে দু’ বছর আগে এই প্রজেক্টে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট ফান্ড পান বিশ্ববিদ্যযালয়ের মাইনিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক অরিন্দম বিশ্বস ও সঞ্জয় গোড়েন। তাঁদের পাশাপাশি এই গবেষণায় যুক্ত হন অধ্যাপক সৌম্যদীপ পতিও। টিন অক্সাইডের (SnO2) মাধ্যমে মিথেন গ্যাস পরিমাপ পদ্ধতি শুরু হয়। গবেষণার স্বার্থে ইসিএল তাঁদের খনির নানা তথ্য গবেষকদের দেয়। পাশাপাশি তাঁরা ফ্রান্সে গিয়েও খনির নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরেই কৃত্তিম খনির পরিবেশ সৃষ্টি করে মিথেন পরিমাপ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। অবশেষে সাফল্য এসেছে। তাঁদের গবেষণা পত্র জার্নালে প্রকাশিত হয়। জানা গিয়েছে, মিথেন বাড়লে খনির তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সেই সূত্র ধরেই পুরো সার্কিটটি কাজ করে। ডিভাইসটি এতটাই আধুনিক করা হয়েছে যে, পরবর্তী আট ঘণ্টায় খনির গর্ভে মিথেনের মাত্রা কতটা থাকবে তার বিস্তারিত তথ্যও দিতে পারবে এ. যন্ত্র। দুর্ঘটনার আগাম পূর্বাভাস পেয়ে গেলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনিং ডিপার্টমেন্ট একাধিক উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কাজ করেছেন এখানকার অধ্যাপক বিজ্ঞানীরা। 

    অধ্যাপক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, আমাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হওয়ার পর বহু সংস্থা বাণিজ্যিক ভাবে এটি তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছে। খনি নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা নেবে এই ডিভাইস। কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইনিং বিভাগ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। 

     নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)