সাহিল আগরওয়াল (প্রত্যক্ষদর্শী):ব্যবসার কাজে ভাগলপুর থেকে এসেছিলাম তিন বন্ধু। অভিন্নহৃদয় তিন— নীরজ কুমার বর্মা, আমি, আর রাচিত খেমকা। ছিলাম ওই অভিশপ্ত হোটেলে। অভিশপ্ত ছাড়া কীই বা বলা যায় একে? সবই তো ঠিক ছিল! হঠাৎ সব যেন তালগোল পাকিয়ে গেল। চিৎকার শুনলাম একটা... আগুন লেগেছে। তারপরই ধোঁয়া। বাড়ছে, প্রতি মুহূর্তে। তিনজনই সিঁড়ি দিয়ে প্রাণপণ ছুটেছিলাম ছ’তলার ছাদের দিকে। আমরা ছিলাম চারতলায়—৪২১ নম্বর ঘরে। দুটো তলা। কতটাই বা দূরে! কিন্তু তখন যে প্রাণান্তকর পরিস্থিতি। দু’জন কোনওমতে পৌঁছতে পারলাম। আমি আর রাচিত। কালচে লাল লেলিহান শিখা আর দমবন্ধ করা কটু ধোঁয়ার থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি। কিন্তু নীরজ কোথায়? তখন কানে শুধু আর্তনাদ ছাড়া কিছু আসছে না। কাঁপছি দু’জনই। ছুটোছুটি, বিষাক্ত পরিবেশ—মৃত্যু ঠিক করেছিল তিনজনকেই গ্রাস করে নেবে। একসঙ্গেই তো বেরিয়েছিলাম তিন বন্ধু। জীবন আর মৃত্যুর সীমারেখা পেরিয়ে ছাদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারলাম আমি আর রাচিত। ঠিক দুটো সিঁড়ি আগে থমকে গেল নীরজ। বিষ বাতাস আর অমানুষিক গরমে ছাদের ঠিক দু’পা আগে শরীরটাকে আর টানতে পারল না ও। থেমে গেল আমাদের ভাগলপুরের ২৯ বছরের তরুণের হৃদস্পন্দন। ময়নাতদন্ত শেষে সরকারি কাগজপত্রের হাজারও ঝকমারি। সবকিছুর শেষে সন্ধ্যায় প্রিয় বন্ধুর নিথর দেহটা নিয়ে রওনা দিলাম বাড়ির দিকে। ২৪ ঘণ্টার দৌড়াদৌড়িতে চোখের জল শুকিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনওমতে ভুলতে পারছি না যে শেষ কয়েকটা মুহূর্তের কথা। বারবার আতঙ্কের মেঘ জমাট বাঁধছে আমাদের বুকে। মনে হচ্ছে, এক যাত্রা... কিন্তু ফলটা কেন পৃথক হয়ে গেল? কেন ছেদ পড়ল অন্তরঙ্গ এই বন্ধুত্বে? ঈশ্বরের আশীর্বাদে জীবন পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু নীরজের পরিবারের সামনে কীভাবে বাকি জীবনটা মাথা তুলে দাঁড়াব?