• ভোররাত পর্যন্ত অসংখ্যবার ফোন, হোটেলের ৪১৯ নম্বর ঘরে এখনও হয়তো বেজে যাচ্ছে রাজেশের মোবাইলটা!
    বর্তমান | ০১ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘সাড়ে ৭টা নাগাদ কলকাতা থেকে ফোন পেলাম। দাদাকে কিছুতেই মোবাইলে পাচ্ছে না বন্ধুরা। শুনে ফোন করলাম। দেখি, ফোন বেজেই যাচ্ছে। বেজে ভয়েজ মেলে চলে যাচ্ছে। বউদিকে বললাম। উনিও ফোন করতে লাগলেন। বেজেই যাচ্ছে। কেউ তুলছে না। এইবার একটু ভয় পেলাম। সীমা বউদিকে বললাম, আমি গাড়ি বের করছি। কটক থেকে রওনা হলাম।’ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলি বলছিলেন ওড়িশার গজেন্দ্র সনতুকা। দাদা রাজেশকুমার সনতুকার দেহ কিছুক্ষণ আগে মর্গে এসেছে। নির্মম সত্যির সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী সীমা আর মেয়ে কৃতিকা। একটু দূরে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছেলে আরিয়ান। ভাই গজেন্দ্রকে ঘিরে সান্ত্বনা দিচ্ছেন দাদা রাজেশের কলকাতার ব্যবসায়ী বন্ধুরা। গজেন্দ্র বিড়বিড় করে বলে যাচ্ছেন, ‘হোটেলের ওয়েটারগুলি তো দাদাকে কতদিন ধরে চেনে। নিজেরা বেরিয়ে এল। দাদাকে সঙ্গে নিয়ে বেরতে পারল না?’ 

    মর্গের কটু গন্ধ, পুলিস ও সাংবাদিকদের ভিড়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত আরও ব্যক্তির শোকসন্তপ্ত বাড়ির লোকজনের আনাগোনা, তারই মাঝে ভিন রাজ্যের বন্ধুর পরিবারকে আগলে রাখছিলেন কলকাতার বন্ধুরা। রাতের পুরী এক্সপ্রেসে বাড়ির পথে রওনা হওয়ার কথা ছিল ওড়িশার বন্ধুর। সত্যিই কার কপালে কী আছে, কে জানে!    

    কাপড় ব্যবসায়ী রাজেশের বড়বাজারে যাতায়াত দীর্ঘদিনের। প্রতিবারই ওঠেন এই হোটেলেই। শহরে তাঁর ব্যবসায়িক বন্ধু মুকেশ সিং বলছিলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ও আমার সঙ্গেই ছিল। বাইরে খাওয়াদাওয়া করলাম। ব্যবসার কাজ সারলাম। ৭টা নাগাদ ওকে হোটেলে নামিয়ে আমি বাড়ি ফিরলাম। কিছুক্ষণ পর টিভিতে দেখি ওর হোটেলে আগুন লেগেছে। আমি স্তম্ভিত! বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ভোর ৪টে অবধি ছিলাম। কতবার যে ফোন করেছি... মোবাইল বেজেই যাচ্ছে। এখনও হয়তো ওর ৪১৯ নং ঘরে ফোনটা বেজেই যাচ্ছে।’ 

    গজেন্দ্র বললেন, ‘দাদার শরীরে একটা আঁচড়ও নেই। একফোঁটা পোড়ার দাগ নেই। মনে হচ্ছে যেন ঘুমিয়ে আছে। যদি ওরা ঠিকসময়ে বের করে আনত... ৪০ বছর ধরে এই হোটেলে আসছে। ওয়েটারদের অনেকেই আমাদের ওড়িশার জাজপুরের লোক। দাদাকে নিয়ে বেরতে পারলে না তোমরা?’ 
  • Link to this news (বর্তমান)