এই সময়: মেছুয়া ফলপট্টির হোটেলের আগুন তুলে দিল একগুচ্ছ প্রশ্ন।
মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ আগুন লাগে হোটেল ঋতুরাজে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জোড়াসাঁকোর থানার আওতাধীন মদনমোহন বর্মন স্ট্রিটের ওই হোটেলে দমকল পৌঁছেছে খবর পাওয়ার ২২ মিনিট পরে। অথচ, ঘটনাস্থল থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং লালবাজার ফায়ার স্টেশন ২ কিলোমিটারের মধ্যে। তার পরেও কেন আরও আগে দমকল পৌঁছল না?
আগুনে প্রিয়জনদের হারানোর পর ক্ষোভে ফুঁসছে মৃতদের পরিবার। দুই শিশুসন্তান এবং শ্বশুরমশাইকে হারানো চেন্নাইয়ের বাসিন্দা টি প্রভুর অভিযোগ, ‘উদ্ধারকাজ খুব ধীরে ধীরে হয়েছে। এতগুলো লোক ভিতরে জ্বলছিল, তখন দমকল ভিতরে কী করছিল তা আমার কাছে বোধগম্য হয়নি। ওঁরা ড্রিল না করে জানলার কাচ ভাঙছে। বারবার করে বলেছি, যা করার তাড়াতাড়ি করুন।’
দীর্ঘ কয়েকবছর ধরেই দমকলের কর্তারা দাবি করে আসছেন, ঘিঞ্জি এলাকায় আগুনের মোকাবিলায় জন্য ফায়ার বল থেকে শুরু করে ছোট মাপের গাড়ি— সবই রয়েছে হাতে। কিন্তু, মেছুয়ার এই ঘিঞ্জি এলাকায় সে সব কোনও যন্ত্রের ব্যবহারই চোখে পড়েনি বলে দাবি স্থানীয়দের। ওই এলাকার বাসিন্দা বিপুল মাইতির অভিযোগ, ‘হোটেলের মধ্যে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধারের জন্য বারবার আমরা ল্যাডার ব্যবহারের কথা বলছিলাম। কিন্তু সেই কাজ করতেও অনেক সময় নিয়েছে দমকল।’
প্রশ্ন উঠছে, এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দমকলের কর্মীদের ছিল না? জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য নিয়মিত কর্মীদের মক ড্রিল হওয়ার কথা। কিন্তু, গত ছ’মাসে তা হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গত তিন মাসে সারপ্রাইজ ভিজিটও নাকি সে ভাবে হয়নি। হোটেল ঋতুরাজের উল্টোদিকেই খাবারের দোকান রমেশ চৌবের। তাঁর কথায়, ‘এই ধরনের ঘটনাতেই তো ফায়ার বল ব্যবহার করা উচিত দমকলের। এমন ঘটনায় না–হলে আর কবে ফায়ার বল কাজে আসবে?’
হোটেলের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর দমকল দাবি করেছে, ওই হোটেলের ফায়ার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। এরপর আর লাইসেন্স রিনিউ করেননি মালিক। মেছুয়া ফলপট্রির বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, কেন আগুন লাগার পরে এ সব বলা হচ্ছে?
লাইসেন্স যখন রিনিউ করেনি, তখন কী আইনি ব্যবস্থা দমকল নিয়েছিল? শুধু মেছুয়ার হোটেলই নয়। শহরের একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এ ভাবেই ফায়ার লাইসেন্স রিনিউ না–করেই ব্যবসা চালাচ্ছে। প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবেই চলছে এ সব বেআইনি কারবার।
মেছুয়ার বাসিন্দা সুনীতা চৌবে ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, ‘দমকল যদি সময়ে আইনি পদক্ষেপ করতো, তা হলে এ ভাবে দমবন্ধ হয়ে এতগুলো প্রাণ যেত না।’ দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর অবশ্য দাবি, ‘কর্মীরা যথেষ্ট ভালো কাজ করেছেন। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার জন্য যা যা করার সবই করা হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনওভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।’