• দু’টি সিঁড়ির মধ্যে বন্ধ একটির দরজা! খুঁজে পাওয়া গেল না চাবি-ই
    এই সময় | ০১ মে ২০২৫
  • আগুন নেভানোর যাবতীয় পরিকাঠামো ঠিকঠাক থাকলে তবেই সেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ফায়ার লাইসেন্স দেয় দমকল। তবে সেই পরিকাঠামো বা লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার বছর দুয়েক পরেও কলকাতার বুকে ব্যবসা যে দিব্যি চালানো যায়, সেটা এক রকম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মেছুয়া ফলপট্টির ‘হোটেল ঋতুরাজ’ এবং সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।

    সময় যত গড়াচ্ছে, ওই হোটেলের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসা অনিয়মের লিস্ট ততই লম্বা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে ওই ঘটনায় মৃতের পরিজন, সবাই ক্ষোভের সঙ্গে একটা কথাই বলছেন— প্রশাসন যদি আগে থেকে সতর্ক থাকত, তা হলে এ ভাবে বেঘোরে ১৪ জনের মৃত্যু হতো না।

    ওই হোটেলের থাকা বোর্ডারদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, ফায়ার অ্যালার্ম থাকলেও তা কাজ করেনি। আবার, হোটেলের ছাদে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দু’টি রিজ়ার্ভার, হোটেলের জুড়ে জলের পাইপলাইন থাকলেও সেখান থেকে প্রয়োজনের সময়ে জল বেরোয়নি। কাজ করেনি স্প্রিঙ্কলারও। শুধু তা–ই নয়, হোটেলের মাত্র গুটি কতক জায়গাতেই ওই যন্ত্রের দেখা মিলেছে।

    আবার যে সব অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার উদ্ধার হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশেরই মেয়াদ ফুরিয়েছে বহু আগে। দমকল তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়েছে, ছ’তলা ওই হোটেলে নীচে নামার ব্যবহারযোগ্য সিঁড়ি ছিল মাত্র একটি। তা ছাড়া, বিল্ডিংয়ের কোনও ম্যাপও হোটেল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি বলে দমকল সূত্রের খবর।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ে কিংবা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্যও হোটেলটি বছর কয়েক আগে ভাড়া দেওয়া হতো। সেই সময়ে ব্যবহার করা হতো দু’টো সিঁড়িই। পরে সামাজিক অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার পর শাটার দিয়ে একটি সিঁড়ির রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    এলাকার মানুষের একাংশের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে আগুন লাগার পর হোটেল কর্তৃপক্ষকে বহু বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও দ্বিতীয় সিঁড়ির ওই শাটারটি খোলা সম্ভব হয়নি। তার কারণ, চাবিই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই দ্বিতীয় সিঁড়ির দরজা খোলা গেলে কয়েক জনের মৃত্যু হয়তো এড়ানো যেত বলে স্থানীয়দের একাংশ দাবি করছেন।

    তবে হোটেলটির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ এখানেই নয়। ওই এলাকায় স্কুল ও ধর্মশালা থাকার জন্য হোটেলের মধ্যে পানশালা তৈরিতে আপত্তি জানিয়েছেন স্থানীয়দের অনেকে। তা সত্ত্বেও সেই আপত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হোটেলের মধ্যে পানশালা তৈরির কাজ শুরু হয় মাস ছয়েক আগে। তার জন্য হোটেলের দোতলার সব জানলা–দরজা ভেঙে সেখানে ইটের গাঁথনি তোলা হয়েছে। ফলে, আগুন লাগার পর হোটেলটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি বলেই দাবি দমকলের।

    দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘হোটেলে অনেক গাফিলতি ছিল। কাচ ভেঙে দমকলকর্মীদের ভিতরে ঢুকতে হয়েছে। ওদের কোনও সিস্টেম কাজ করেনি।’ হোটেলে ঠিক কী পরিস্থিতি ছিল, সেটা দেখতে তাঁরা বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছেন বলে জানিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা।

    তিনি বলেন, ‘কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটল, হোটেলে আগুন নেভানোর কী কী ব্যবস্থা ছিল, বাস্তবে সেগুলোর কতটা কাজে এসেছে, সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম ধরা পড়লে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)