বিভাস গুহ (দমকলের প্রাক্তন অধিকর্তা)
ঋতুরাজ হোটেলের মর্মান্তিক পরিণতি আজ এত বছর পরেও মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রায় দেড় দশক আগে কলকাতায় ঘটে যাওয়া দু’টি অগ্নিকাণ্ডের কথা। প্রথমটি ২০১০–এর ২৩ মার্চে স্টিফেন কোর্ট আর দ্বিতীয়টি ২০১১–র ৯ ডিসেম্বর আমরি হাসপাতালের।
তবে মঙ্গলবার বড়বাজারের হোটেলে লাগা আগুন এবং তার জেরে প্রাণহানির ঘটনার সঙ্গে বেশি মিল আমরির। কারণ, স্টিফেন কোর্টে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাটাই ছিল না। আর আমরির মতো ঋতুরাজেও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমটা থাকলেও জরুরি দরকারে সেটা একটুও কাজে আসেনি। এই যে গাফিলতি, সেটা নিয়মিত পরিদর্শনে ধরা পড়ার উপায়ও নেই দমকলের কাছে। এত লোকবল কোথায়!
আসলে এই যে বারে বারে শহরে আগুন লাগছে এবং লোক মরছে, তার কারণ হলো, বাড়িগুলোর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় নজরদারি চালানোর অফিসার ও কর্মী অসম্ভব কমে গিয়েছে। দমকলের এই পরিকাঠামোগত লোকবলের ঘাটতির জন্যই এড়ানো যাচ্ছে না একের পর এক অগ্নিকাণ্ড।
অথচ ২০০৪ সালে বাম সরকার আইন করেছিল, যাতে প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থা দিয়ে এই নজরদারির কাজটা করানো যায়। কিন্তু বাম সরকার নিজেই সেটার বাস্তবায়ন করেনি। আইনটা কিন্তু এখনও আছে। এখনও সময় আছে। বর্তমান সরকার আইনটা বাস্তাবায়িত করলে এমন ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা নিশ্চয়ই কমবে।
নইলে ৪১টি প্রাণ কাড়া ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ছাড়া স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ড কিংবা আমরিতে অথবা ঋতুরাজে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থেকেও নিষ্ক্রিয় পড়ে থাকার ঘটনা এড়ানো যাবে না। ফলে হয় আগুনে নয় ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুও একপ্রকার অনিবার্য। আমরিতে সেন্ট্রাল এসি-র ডাক্ট দিয়ে ধোঁয়া ছড়িয়েছিল।
ডাক্টে ড্যাম্পার থাকে। তাতে ঠান্ডা হাওয়া ছাড়া আগুন বা ধোঁয়া গেলেই অ্যান্টি-লক সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু ব্যবস্থাটা কাজ করেনি। তার উপর আবার ঘুমে ব্যাঘাত হবে বলে নিরাপত্তাকর্মীরা ফায়ার অ্যালার্ম বন্ধ করে রাখায় স্মোক ডিটেক্টর, ড্যাম্পার স্প্রিঙ্কলার ইত্যাদিও কাজ করেনি। ফলে বেসমেন্টে লাগা ছোটখাটো একটা আগুনের ধোঁয়া গোটা বাড়িতে ছড়িয়ে গিয়েছিল। তাতেই ৯২ জনের দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু।
সে তুলনায় ঋতুরাজের আগুনটা বড়। কিন্তু ঘটনা এখানেও একই। ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম কাজ করেনি। দমকলের নিয়মমতো, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা পরিচালনা করার মতো বেতনভুক কর্মীও ছিলেন না। ফলে গোটা ব্যবস্থাটা ছিল খাতায়কলমে, প্রয়োজনের সময়ে তা কাজ করেনি। জানলাগুলো হয় কাচ অথবা ইঁটের গাঁথনিতে বন্ধ ছিল। ফলে গোটা বাড়িটা গ্যাস চেম্বারে পরিণত হতে সময় লাগেনি। দু’ জন বাদে সকলেই মারা গিয়েছেন ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে।