সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়
মেছুয়া ফলপট্টির মতো কলকাতায় অগ্নিকাণ্ড প্রবণ এলাকা আছে বেশ কিছু। সেগুলো নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করতে, কোনও অগ্নিকাণ্ডের অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা করতে এবং অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি যথাসম্ভব কমাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন বছর আগেই দু’টি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। মেছুয়া ফলপট্টি এলাকার হোটেলে মঙ্গলবার রাতে আগুন লেগে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় স্বভাবতই ওই দু’টি কমিটির দিকে আঙুল উঠেছে প্রশাসনের অন্দর থেকেই।
সরকারি সূত্রের খবর, কমিটিগুলো গঠিত হওয়ার পর পরই কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল। ব্যস, ওই টুকুই। তার পর কোনও কমিটির কোনও বৈঠকই হয়নি। তার মধ্যে একটি কমিটিতে থাকা দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর বক্তব্য, ‘প্রয়োজন হয়নি, তাই কমিটি বসেনি। তবে কমিটির সুপারিশ মতো শহরের কতগুলো বস্তি এলাকায় হাইড্রেন করে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা।’
দমকলের এডিজি অন্য কমিটির নেতৃত্বে। ওই কমিটি কতগুলো বহুতল, বাজার, হোটেল বা তল্লাটকে চিহ্নিত করেছে অগ্নিকাণ্ড প্রবণ হিসেবে? দমকলের ডিজি রণবীর কুমারের কথায়, ‘এখনই বলতে পারব না। এডিজি (নীলাদ্রি চক্রবর্তী) বাইরে আছেন। একমাত্র উনি বলতে পারেন।’ তবে দমকলের একটি সূত্রের খবর, বহুতল, হোটেল, বাজার মিলিয়ে অগ্নিকাণ্ড প্রবণ ১০০ থেকে ১৩২টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
ট্যাংরার একটি চামড়ার গুদামে ২০২২ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওই দু’টি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করা হয়। একটির সদস্য পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, সরকারের সচিব পদমর্যাদার এক আধিকারিক ও কলকাতা পুলিশ কমিশনার।
অন্য কমিটির নেতৃত্বে দমকলের এডিজি। সেই কমিটিতে রয়েছেন দমকল, কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা। তাদের প্রধান কাজ পাঁচটি— এক, অগ্নিকাণ্ড প্রবণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করা, দুই, কোনও অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা, তিন, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামগুলো থাকা ও আগুনের সঙ্গে লড়াই করতে জানা পর্যাপ্ত কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা, চার, অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচানোর জন্য সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং পাঁচ, আগুন লাগার কোনও ঘটনা ঘটলে যাতে দ্রুত ও কার্যকর ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তার প্রস্তুতি রাখা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, একটি কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘প্রথম কয়েক মাস নিয়ম করে বৈঠক হয়েছিল। ট্যাংরা, তারাতলা, মেহতা বিল্ডিং, বড়বাজারের কয়েকটা তল্লাটে গিয়েছিলাম। তার পর আর কিছু হয়নি।’
সম্ভবত তার জন্যই মেছুয়া ফলপট্টি এলাকার ‘হোটেল ঋতুরাজ’–এর এত বড় গাফিলতি কারও চোখে পড়েনি। দমকল জানাচ্ছে, হোটেলটির ফায়ার লাইসেন্স শেষ বারের মতো রিনিউ করা হয়েছিল ২০২২ সালে।
অথচ বাণিজ্যিক জায়গার ফায়ার লাইসেন্স ১১ মাস অন্তর রিনিউ করানোর কথা। শুধু তা–ই নয়, ফায়ার অডিট রিপোর্ট জমা দিয়ে একবার যারা ফায়ার লাইসেন্স ১১ মাসের জন্য পেয়ে যাচ্ছে, তারা ১১ মাস ধরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখছে কি না, মক ড্রিল করাচ্ছে কি না, সরঞ্জামগুলোর উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ করছে কি না, সে সব দমকল বিভাগ আর দেখে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ সব ক্ষেত্রে দমকলের সারপ্রাইজ় ভিজ়িট করার কথা। অভিযোগ, দমকল সেটা এক রকম করে না বললেই চলে। মেছুয়ার ঘটনার পর অবশ্য দমকলের ডিজি রণবীর কুমার বলছেন ‘এ বার থেকে সারপ্রাইজ় ভিজি়ট করতে হবে। যাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়নি, তাদের ক্ষেত্রেও করতে হবে। তবে সবার আগে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। না–হলে কিছুই হবে না।’