এই সময়, সেবক: গভীর জঙ্গলে রয়েছে বন দপ্তরের নজর মিনার এবং বনচৌকি। পালা করে দু’–তিনজন বনকর্মী থাকেন সেখানে। রান্না করে সেখানেই খাওয়া দাওয়া করেন তাঁরা। এতদিন কোনও সমস্যা না হলেও বুধবার তাঁদের খাবারের এক ‘ভাগীদার’ জুটে যাওয়ায় বিপত্তি তৈরি হয়।
এ দিন তাড়াতাড়ি ডাল সেদ্ধ করতে প্রেসার কুকারে দিয়ে দেন বনকর্মীরা। প্রেসার কুকারের সিটির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে সেদ্ধ ডালের গন্ধ। সেই গন্ধ চলে যায় কাছেই থাকা এক প্রকাণ্ড মাকনার (দাঁত নেই এমন বুনো হাতি) নাকে। দেরি না করে গন্ধবিচার করে হাতিটি চলে আসে ওই বনচৌকিতে।
রান্নাঘরের জানালার ভিতরে শুঁড় চালান করে শাক, আলু, গাজর সবই উদরস্ত করে। এর পরেই বুনোটির নজরে পড়ে প্রেসার কুকারটি। বারকয়েক ঝাঁকিয়ে সেটি খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কুকারটিকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে ঢুকে যায় জঙ্গলে। পিছন থেকে বনকর্মীরা প্রবল চিৎকার করলেও প্রেসার কুকারটি শুঁড়ছাড়া করেনি মাকনাটা।
সেবক পাহাড় লাগোয়া মহানন্দা অভয়ারণ্যের দশ মাইল রেঞ্জের গভীর জঙ্গলের ভিতরের বনচৌকিতে বুধবার সকালে এমন আজব ঘটনা ঘটে। দশ মাইল রেঞ্জের রেঞ্জার রাজকুমার লায়েক বলেন, ‘এর আগেও এই ক্যাম্পে হাতির হানাদারি চলেছে। এ বারে কুকার উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল। পরে আর সেটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
প্রায়শই জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের রান্নাঘর, স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, দোকানে হানা দেয় হাতির পাল। খাবার সাবাড় করে। এমনকী, বিন্নাগুড়ি সেনা ছাউনির ডাইনিং হল পেরিয়ে সরাসরি রান্নাঘরে ঢোকার ইতিহাসও রয়েছে গজরাজদের। কিন্তু প্রেসার কুকার তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেনি বলেই জানাচ্ছেন বনকর্মীরা। হাতির হানায় এ দিন বনচৌকির কর্মীদের কার্যত উপোস করেই থাকতে হয়েছে।
কারণ, আবার যদি রান্না করা হয়, তা হলে সেই গন্ধে হাতির ফের আগমন ঘটতেই পারে। সেই ভয়ে আর রান্না করেননি তাঁরা। শুকনো মুখে এক বনকর্মী বলেন, ‘এখানে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার কোনও ব্যবস্থাই নেই। আর রান্না করলে আবার যদি হাতি আসে। তাই সেদিকে আর যাইনি।’ তাঁর আক্ষেপ, ‘প্রেসার কুকারটি যদি ফেরত পাওয়া যেত।’