সুজয় মুখোপাধ্যায়
২২ বছর চাকরি করেছেন। স্কুলের প্রতিটি ইট, কাঠ, পাথর তাঁর চেনা। রোদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিয়মিত স্কুলে গিয়েছেন প্রায় প্রতিদিনই। প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর আনুগত্য পেয়েছেন। তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে পড়ুয়াদের ভালোবাসা। সেই কর্মস্থলই ছিল তাঁর দৈনন্দিন উপাসনার মন্দির। ‘সার্ভিস বুক’-এ ২০২৪ সালেই তাঁর নামের পাশে ‘রিটায়ার্ড’ লেখা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ভালোবাসার টান আটকায় কার সাধ্যি! তাই, অবসরের তিন বছর পরেও রুটিন মাফিক আজও স্কুলে যান সকলের প্রিয় ‘সঞ্জয় দাদা’।
হুগলির চন্দননগর খলিসানি বিদ্যামন্দিরে ১৯৯৯ সালে গ্রুপ ডি পদে চাকরি পান শ্রীরামপুর মাহেশের বাসিন্দা সঞ্জয় নন্দী। এই স্কুলেই কেটেছে কর্মজীবনের অধিকাংশ সময়। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছেন নিজেকে। অবসরের পরেও মন টানে স্কুলের জন্য। সঞ্জয় জানান, আমি শুধু স্কুলে আসি ছোট ছোট পড়ুয়াদের ভালোবাসায়। ১৯৯৯ সালে স্কুলে যোগদান করি আর ২০২৪-এ স্কুল থেকে অবসর নিয়েছি। গত বছর থেকে আমি স্কুলে ‘স্বেচ্ছাশ্রম’ দিচ্ছি।
তাঁর কথায়, ‘আমি নিজেও স্কুলকে খুব ভালোবাসি। আমার স্কুলে আসা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু আমি তাঁদের কথার কোনও উত্তর দেইনি। স্কুল থেকে কোনও টাকা পাই না, তবে সরকারি পেনশন পাই, তাতে আমার চলে যায়। পরিবার আমাকে কোনদিনও নিষেধ করেনি। বরং স্কুলে যাওয়ার কথাই বলেছে। স্কুলের কমবেশি সব কাজই করি। তবে সরকারি কোনও কাজ করি না। প্রধান শিক্ষক যা বলেন, তাই করি। আমার যতদিন শরীর ভালো থাকবে, ততদিন আমি স্কুলে আসব।’
স্কুলের একজন গ্রুপ ডি কর্মী রয়েছেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল বাতিল করে কর্মস্থলে যাচ্ছেন না গ্রুপ ডি কর্মীরা। সেই অসুবিধা অবশ্য এই স্কুলের নেই। এই স্কুলের শিক্ষাকর্মী ওই ব্যাচের নয়। তবে স্কুলের নানা কাজ সামলে দেওয়ার জন্য প্রায় রোজই অনেকটা সময় স্কুলে কাটিয়ে যান সঞ্জয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুভায়ন মিত্র বলেন, ‘আমাদের স্কুলে গ্রুপ সি কর্মী নেই। একজন প্রয়াত হয়েছেন। আর একজন আপার প্রাইমারিতে চাকরি পেয়ে চলে গিয়েছেন। বর্তমানে একজন গ্রুপ ডি কর্মী রয়েছেন। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সঞ্জয়বাবু অবসর নেন তার পরে আমি তাঁকে বিশেষ অনুরোধ করি। তখন থেকেই তিনি নিয়মিতভাবে স্কুলে আসেন। স্কুলের অনেক কাজই তিনি সামলে দেন।’