• বিউটির বাবা দুঃস্থ, বিয়ে দিলেন আলমগির, সফিকুলরা
    এই সময় | ০১ মে ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    আলো ঝলমলে বিয়ের বাসর। সানাই বাজছে। পোলাও–মাংসের খুশবু চারপাশে। দলে দলে আসছেন অতিথিরা। হাসিমুখে তাঁদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা–মা। সফিকুল, রূপালী, আলমগিরের মতো দাদা–দিদি আর বন্ধুরা নেমে পড়েছে সব কাজ সামলাতে। কেউ সাজাচ্ছেন ছাদনাতলা। কেউ দেখে নিচ্ছেন, প্যান্ডেলে আলো লাগবে কি না। কেউ তালিকা দেখে মিলিয়ে নিচ্ছেন, হেঁশেলে কোন জিনিসটা আনা বাকি।

    বিউটি স্বপ্নেও ভাবেননি, এমন হইহই করে তাঁর বিয়ে হয়ে যাবে। টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছিলেন না বিউটির বাবা সনাতন প্রামানিক। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গোল গ্রামে থাকেন। এক চিলতে ঘরে স্ত্রী মাধবী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বাস। সনাতন পেশায় নাপিত, সামান্য রোজগার।

    তার উপরে বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় দোকান খুলতে পারছিলেন না। বড় মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছিলেন কোনওক্রমে। মেজো মেয়ে বিউটি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে আর পড়াশোনা চালাতে পারেননি। তাঁকে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সনাতন টাকা জোগাড় করে উঠতে পারছিলেন না।

    এই পরিস্থিতিতে হরিশ্চন্দ্রপুরের কয়েকজন তরুণ–তরুণী সনাতনের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন। আঁচল ট্রাস্ট ও নতুন আলো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আলমগির খান, সফিকুল আলম, রূপালী খাতুন, সাইনা আক্তার, বদরুজ্জামালরা জুটে যান বিউটির বিয়ের আয়োজনে। বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে আলমগিররা পৌঁছে দেন প্রতিবেশী, আত্মীয়দের কাছে।

    মঙ্গলবার ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল তরুণীর। পুরোহিত মন্ত্র পড়ে চার হাত এক করে দিলেন। সবাই সাক্ষী থাকলেন শুভদৃষ্টির। শতাধিক গ্রামবাসী পাত পেড়ে খেলেন মাংস, পোলাও, সাদা ভাত, পনির বাটার মশলা, বেবি নান, চানা মশলা, মিষ্টি। বিয়েবাড়ি জুড়ে ছিল রকমারি আলো। তাসা আর ব্যান্ডের বাজনায় একেবারে মনে হচ্ছিল, পুজো এসে গিয়েছে।

    মালদার মানিকচকের মোহনা গ্রামের সিটন প্রামানিকের সঙ্গে বিয়ে হলো বিউটির। অনেকদিন আগেই পাত্র পছন্দ করে রেখেছিলেন সনাতন। দুই পরিবারে পাকা কথাও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে বিয়ে পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন সনাতন। সেই বাধা দূর করে দিলেন এলাকারই ছেলেমেয়েরা। আলমগির বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছিলাম যে বোনটির বিয়ে আটকে আছে। তাঁর বাবাও অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তাই আমরা যতটা পেরেছি সাহায্য করেছি। চার হাত এক হয়েছে, এটা আনন্দের। আমরাও খুব মজা করেছি বিয়েতে।’ তিনি জানান, আগামীতেও এ ধরনের সমস্যার কথা জানতে পারলে আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।

    চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ এই বিয়ের কথা জানতে পেরে অভিভূত। বলেন, ‘সত্যি এটা প্রশংসনীয়। এই সংগঠনের ছেলেমেয়েদের দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করছি। ওঁরা যেন এ ভাবেই গরিবের পাশে থেকে সহযোগিতা করে যান।’ চাঁচলের মহকুমাশাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয় এ কাজের জন্য। খুবই ভালো লাগছে শুনে।’

    এতদিনের বাড়িঘর ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আগের দিনে বিউটির মন খারাপ। তবু নীল বেনারসি আর লাল চেলির আড়ালে সলজ্জ বধূর চোখে ছিল একরাশ আনন্দ। বলেন, ‘দাদা–দিদিরা না থাকলে এ দিনটা বুঝি আসত না। ওরা এ ভাবেই সকলের পাশে থাকুক।’

  • Link to this news (এই সময়)