• ‘মহৎ’ কাজে লক্ষাধিক ব্যায়! বিপুল খরচে কটাক্ষ বিরোধীদের, বিতর্কে পুরসভা
    এই সময় | ০১ মে ২০২৫
  • চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার

    অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘায় জগন্নাথ দেবের মন্দিরের উদ্বোধন। গোটা রাজ্যে তা ‘লাইভ’ দেখানোর নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতে গিয়ে বিতর্কে জড়াল কোচবিহার পুরসভা। মুড়ি-মুড়কির মতো টাকা খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বাম–বিজেপি সরব হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান অবশ্য এটিকে ‘মহৎ’ কাজ বলে বর্ণনা করেছেন।

    বৃহস্পতিবার কোচবিহার মদনমোহন মন্দিরের সামনের রাস্তায় দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানোর আয়োজন করেছিল কোচবিহার পুরসভা ও জেলা প্রশাসন। যৌথ ভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা বলা হলেও সব খরচই করেছে কোচবিহার পুরসভা। তাও আবার নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা ভেঙে।

    এই অনুষ্ঠানে খাবার থেকে শুরু করে উপহার দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনুষ্ঠানে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছে কোচবিহার পুরসভা। অথচ, পুরসভার কোষাগারের হাল বেহাল। এ দিনের অনুষ্ঠানে জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা, কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য, জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

    পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি আধিকারিক ও সাধারণ মানুষজন ভিড় করেছিলেন। সরাসরি সম্প্রচার অনুষ্ঠানের আগে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের অধীনে ২২টি মন্দিরের পুরোহিতকে সম্মাননা জ্ঞাপন করে পুরসভা। প্রত্যেক পুরোহিতকে একটি করে মদনমোহনের মূর্তি দেওয়া হয়েছে। যার প্রত্যেকটির দাম প্রায় ১৬০০ টাকা। দেওয়া হয়েছে শাল। যার দাম নাকি প্রায় আড়াই হাজার টাকা। পুরোহিতরা পেয়েছেন পাঞ্জাবির কাপড়। যার দাম প্রায় ১১০০ শো টাকা।

    এছাড়াও দেওয়া হয়েছে ধুতি–সহ অন্যান্য সামগ্রী। পুরোহিতপিছু প্রায় ছ’হাজার টাকা খরচ করা হয়। পাশাপাশি প্রায় এক হাজার মিষ্টির প্যাকেট বিলি করা হয়েছে। ৪ হাজার লোককে খিচুড়ি, লাবড়া খাওয়ানো হয়েছে। বিশাল বড় প্যান্ডেল করা হয়। পাশাপাশি বড় জায়ান্ট স্কিনের ব্যবস্থাও ছিল। সব মিলিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছে পুরসভা।

    বিরোধী রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও এই বিপুল খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘কোচবিহার পুরসভা বলছে তাদের আর্থিক সমস্যা চলছে। তার জন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি বাড়িতে কর বাড়ানো হচ্ছে। অথচ সেই সাধারণ মানুষের করের টাকাতেই এই সমস্ত খরচ করা হলো।’

    তাঁর অভিযোগ, এই টাকা থেকেও কাটমানি খাওয়া হয়েছে। বাম কাউন্সিলার মধুছন্দা সেনগুপ্ত বলছেন, ‘সামনেই বর্ষা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অনেক কাজ করা দরকার। বিশেষ করে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন। সে সব কাজ না করে এই সমস্ত অনুষ্ঠানে ধর্মের নাম করে এত টাকা খরচ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই বোর্ড মিটিংয়ে প্রশ্ন তুলব।’

    তবে চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘বিরোধীদের এ সব কথার কোনও যুক্তি নেই। একটি মহৎ কাজে, মহৎ অনুষ্ঠানে এই খরচ করা হয়েছে। রাস মেলার আয়ের টাকা থেকেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাই বিরোধীদের এসব কথা বলে কোনও লাভ নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)