রাজকুমার কর্মকার, আলিপুরদুয়ার: তিনি জীবিত। বহাল তবিয়তে কাজ করছেন। এদিকে তাঁর নামে বেরিয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট! এমনকী তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। অবাক করা কাণ্ড ঘটেছে ডিমডিমা চা বাগান এলাকায়। ঘটনা সামনে আসার পর হুলস্থূল পড়ে গিয়েছে।
ডুয়ার্সের ডিমজিমা চা বাগানের শ্রমিক জয়পাল মাছুয়া। দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে কাজ করছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রভিভান্ড ফান্ড বা পিএফ রয়েছে। তবে সম্প্রতি তাঁর পিএফের সব টাকা তুলে নেওয়ার আবেদন জমা পড়ে জলপাইগুড়ির প্রভিডেন্ট ফান্ড দপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে। কোনও কাগজের গরমিল থাকায় সেই আবেদন প্রভিডেন্ট ফান্ড দপ্তর থেকে ভেরিফিকেশনের জন্য আসে ডিমডিমা চাবাগানের পিএফ অফিসারের কাছে। আবেদনপত্র দেখে চক্ষুচড়ক গাছ পিএফ অফিসার বিনোদ রাইয়ের।
যাকে মৃত বলা হচ্ছে সেই জয়পাল প্রতিদিন কাজ করছেন। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় জয়পালকে। ছুটে এসে সব দেখেশুনে আকাশ থেকে পড়েছেন তিনি। খানিকটা আতঙ্কেও রয়ছেন জয়পাল। তাঁর কথায়, “আমি দিব্বি কাজে যাচ্ছি। হেটে চলে বেড়াচ্ছি । অথচ আমার ডেথ সার্টিফিকেট বের হয়ে গেল। আবার সেই সার্টিফিকেট দিয়ে আমার পিএফের টাকা তুলে নেওয়ার আবেদনও জমা পড়েছে। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই কেউ বা কারা এই কাজ করেছে। আমি অভিযোগ জানিয়েছে।” বীরপাড়া থানায় একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে ডিমডিমা চাবাগানে পিএফের অফিসার বলেন, “পিএফ দপ্তর থেকে আমাদের কাছে আবেদন পত্র আসার পর বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। দেখা যাচ্ছে আমাদের চা বাগানের সিল একই রকম। কিন্তু চাবাগানের ম্যানেজারের সই জাল মনে হচ্ছে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।”
জীবিত অবস্থায় কী করে ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া গেল? উঠছে সেই প্রশ্ন। জলপাইগুড়ির মাল পুরসভা থেকে এই ডেথ সার্টিফিকেট বের করা হয়। সেখানে ২০২৪ সালের ২৩ আগষ্ট এই মৃত্যুর শংসাপত্র রেজিস্টার করা হয়। ২০২২ সালের ২০ মার্চ জয়পালের মৃত্যু হয়েছে বলে লেখা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মাল পুরসভার চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি বলেন, “আমরা এই অভিযোগ পেয়েছি। এটা খুব আশ্চর্যের বিষয় যে একজন জীবিত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট আমাদের পুরসভা থেকে বের হয়েছে। আমরা থানায় এই ঘটনার অভিযোগ জমা করব।”
উল্লেখ্য, এর আগেও আফগান নাগরিকদের জন্মের শংসাপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মাল পুরসভার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত হচ্ছে। এবার জীবিত চা শ্রমিকের মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠল। এই ঘটনায় ডুয়ার্সের চা বলয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মাদারিহাটের বিধায়ক জয়প্রকাশ টোপ্পো এই ঘটনায় তদন্তের দাবি তুলেছেন। জয়প্রকাশ টোপ্পো বলেন, “জীবিত, সুস্থ চা শ্রমিকের ডেথ সার্টিফিকেট বেরিয়েছে শুনেছি। জয়পাল আমার কাছেও এসেছিল। আমি এই ঘটনার তদন্ত করে দোষিদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। চা বলয়ে শ্রমিকদের পিএফের টাকা হাতানোর জন্য এক শ্রেণির দালাল চক্র তৈরি হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।”