• বন্ডেড লেবারের অভিশপ্ত জীবন পেরিয়ে মুক্তির স্বাদ, একঝাঁক তরুণকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে প্রশাসন-এনজিও
    এই সময় | ০২ মে ২০২৫
  • কিছু রোজগারের আশায় ভিনরাজ্য পাড়ি দেন অনেকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে নানা ফাঁদে জড়িয়ে কার্যত ক্রীতদাসে পরিণত হন অনেকে। তাদেরকে উদ্ধার করে যৌথভাবে বাড়ি ফেরানোর কাজ করে রাজ্য এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। উদ্ধার হওয়া কিশোর-তরুণদের নতুন করে মূলস্রোতে ফেরানোর ব্যবস্থাও করা হয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১৪৩ জনকে এভাবে বন্ডেড লেবারের জায়গা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে।

    এ ভাবে আটকে পড়া কিশোর-তরুণের জীবন কেমন ছিল? উদ্ধার হওয়া হুগলির এক তরুণ জানাচ্ছেন, চেন্নাইয়ে সোনার কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন তিনি। সারা দিন কাজ করতে হতো। মাঝরাতের পরে খাবার মিলতো। এখন কী অবস্থা? তিনি বলছেন, ‘সরকারের সাহায্যে ট্রেনিং পেয়েছি। তার পরে চাকরিও করছি। এখন নিয়মিত বেতন পাই। ছুটি পাই, অন্য সুবিধাও আছে।’ একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আরও এক তরুণ। তিনিও সোনার কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন। অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে শিউরে উঠেছেন তিনি। বলছেন, ‘আমারই সমবয়সী অন্যদের সঙ্গে আটকে রাখা হয়েছিল। খালি গায়ে কাজ করতে হতো। টানা কাজ করে যেতে হতো। ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করতে হতো। সকাল ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতাম। সিসিটিভি ক্যামেরায় আমাদের উপর নজর রাখা হতো।’

    এদের মতো কিশোর-তরুণদের উদ্ধারের চেষ্টা চলে সবসময়। বন্ডেড লেবারদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে প্রবীর মণ্ডল জানাচ্ছেন, শিশু শ্রমিক নিয়ে বহু আলোচনা হয়, কিন্তু বন্ডেড লেবার নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। কিন্তু এটি একটি জ্বলন্ত সমস্যা বলেই তাঁর মত। তিনি জানাচ্ছেন, নানা জায়গায় ঋণের জালে জড়িয়ে বন্ডেড লেবার তৈরি করা হয়। অনেকসময়ে নেশায় বুঁদ করিয়ে রাখা হয়। তিনি জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে দেখা যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বন্ডেড লেবার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। কী ভাবে খবর মেলে? প্রবীর মণ্ডল জানাচ্ছেন নানা সূত্রে তাঁদের কাছে খবর আসে। বলছেন, ‘খবর পেলে আগে খোঁজ নেওয়া হয় কতটা সত্যি। পরিচয় গোপন রেখে খোঁজ নেওয়া হয়। যেখানে বন্ডেড লেবার হিসেবে যারা কাজ করাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা হয়।’ যাদের উদ্ধার করা হয়, তাদের প্রথমে শেল্টার হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের ট্রেনিং দেওয়া হয়, চেষ্টা করা হয় তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের। প্রবীরের মতে, তৃণমূল স্তরে সচেতনতা প্রসার যতটা হবে, তত আটকানো যাবে এই ধরনের সমস্যা। এই ফাঁদ থেকে ফিরিয়ে এনে ওই কিশোর-তরুণদের যাতে মূলস্রোতে আনা যায়, তার জন্য সাধারণ জনগণ এবং প্রশাসনের মধ্যে যোগাযোগ আরও নিবিড় হওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

    শ্রম দপ্তরের তরফে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এখন বন্ডেড লেবার নেই। রাজ্যে এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে কোনও ব্যক্তিকে জোর করে ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার করা হয়। রাজ্যে ভূমি সংস্কার হয়েছে, একাধিক সামাজিক প্রকল্প রয়েছে। যার ফলে বাংলায় বন্ডেড লেবার প্রায় নেই বলেই জানানো হয়েছে শ্রম দপ্তরের সূত্রে। কিন্তু অনেকসময়েই বাংলার কোনও কিশোর বা সদ্য তরুণেরা কাজের জন্য ভিনরাজ্যে গেলে কোনওভাবে বন্ডেড লেবারের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে। তখন তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নেয় রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গের শ্রম দপ্তর, পুলিশ, আরও একাধিক দপ্তর এবং একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলে তাদের ফিরিয়ে আনে। ট্রেনিং দিয়ে মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করে বলে জানাচ্ছেন শ্রম দপ্তরের আধিকারিকেরা। প্রয়োজনে বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে ট্রেনিং দেওয়া হয়, এমনকী নিয়মিত কাউন্সিলিং করানোর ব্যবস্থাও করা হয় প্রশাসনের তরফে।

  • Link to this news (এই সময়)