যুবসমাজে ফুসফুসে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি! নেপথ্যে কি শুধুই ধূমপান না পরিবেশ দূষণও...
আজকাল | ০২ মে ২০২৫
গোপাল সাহা: যত দিন গড়াচ্ছে ফুসফুসে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাদ পড়ছে না যুবসমাজ (নারী ও পুরুষ উভয়) পর্যন্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, সমাজে ধূমপানের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ফুসফুসে ক্যানসারের আধিক্য। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত ধোঁয়া এবং প্যাসিভ স্মোকার অর্থাৎ পাশের লোকের ধূমপানের কারণেও এই রোগের অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণও ফুসফুসে ক্যানসারের আরও একটি বড় কারণ।
পরিসংখ্যানগত দিক থেকে দেখলে-
• বাৎসরিক হারে ধূমপানে (বিড়ি, সিগারেট বা যে কোনও রকম) ফুসফুসে ক্যানসারের পরিমাণ ৮০-৯০ শতাংশ।
• বাকি ১০-২০ শতাংশ ক্যানসার হয় নতুন বাড়ি, প্যাসিভ স্মোকিং, অ্যাসবেস্টস, সিলিকন, পরিবহন ইত্যাদি কারণে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফুসফুসে ক্যানসারের বয়সসীমা ৫০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে। তবে বর্তমানে অতিরিক্ত ধূমপান ও পরিবেশ দূষণের কারণে যুব সমাজে, মহিলা ও পুরুষ নির্বিশেষে এই রোগে আক্রান্তের হার ক্রমাগত বাড়ছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী এই ক্যানসারের চিকিৎসা মূলত চারটি প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। ১) রেডিয়েশন, ২) অপারেশন, ৩) ইমিউনো থেরাপি, ৪) ওষুধের মাধ্যমে- এই চার পদ্ধতিতে এই ধরনের কর্কট রোগের চিকিৎসা হয় বলে জানা যাচ্ছে বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে।
ক্যানসারের পর্যায় বা স্তরবিন্যাস:
• স্টেজ ০: ক্যানসার এপিথেলিয়াল স্তরে সীমাবদ্ধ।
• স্টেজ ১: ক্যানসার স্থানীয়করণ করা হয়, আকারে ছোট।
• স্টেজ ২: ক্যানসার বেড়েছে, কাছাকাছি লিম্ফ নোডগুলিতে ছড়িয়ে থাকতে পারে।
• স্টেজ ৩: ক্যানসার লিম্ফ নোড বা আশেপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়েছে।
• স্টেজ ৪: ক্যানসার দূরবর্তী অঙ্গ বা টিস্যুতে মেটাস্ট্যাসাইজ করেছে।
উল্লেখ্য, এই ফুসফুসের ক্যানসার রোগের চারটি স্তরের প্রথম দু'টি স্তর (আর্লি স্টেজ) যা চিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব বা নিরাময় করা যেতে পারে বলে চিকিৎসকদের মত। এই পর্যায়ে বা স্টেজে চিকিৎসা মূলত অপারেশন বা রেডিয়েশন দিয়ে সুস্থ করা সম্ভব। অ্যাডভান্স স্টেজ অর্থাৎ ২, ৩ ও ৪ নম্বর স্টেজে বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অথবা বিশেষজ্ঞদের মতে সুস্থ হওয়া প্রায় অসম্ভব। একমাত্র ওষুধের দ্বারা অর্থাৎ খাওয়ার ওষুধের দ্বারাই চিকিৎসা হয়ে থাকে। বলাবাহুল্য এক্ষেত্রে মরবিডিটিকে কিছুটা সম্ভব দীর্ঘায়িত করা যেতে পারে।
ক্যানসার (কর্কট) রোগের স্তরবিন্যাস টিএনএম দ্বারা বিভাজন করা হয়-
i) টি (টিউমার): প্রাথমিক টিউমারটির আকার এবং ব্যাপ্তি বর্ণনা করে।
ii) এন (নোড): লিম্ফ নোডের জড়িততা নির্দেশ করে।
iii) এম (মেটাস্টেসিস): ক্যানসার দূরবর্তী স্থানগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে কি না তা দেখায়।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, এ রোগের চিকিৎসায় আধুনিক পদ্ধতিতে ইমিউনো থেরাপি এক গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। যার মাধ্যমে শরীরের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করা বা বৃদ্ধি করা, অর্থাৎ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলা হয়। এই পদ্ধতিতে ক্যানসার রোগে আক্রান্ত সেলগুলিকে আর বাড়তে না দেওয়া এবং তার বিনাশ করা। এই পদ্ধতির চিকিৎসা যে কোনও পর্যায়ে হতে পারে বলে চিকিৎসকদের মত।
ফুসফুসে ক্যানসার নিয়ে আজকাল ডট ইনের তরফ থেকে কথা বলা হয়েছিল স্বনামধন্য কর্কট রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পি এন মহাপাত্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, "বর্তমানে ধূমপানের কারণে যুবসমাজকে নানাভাবে আক্রান্ত করছে এই রোগে। সিংহভাগ আক্রান্তের বয়স যদিও ৫০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে। কিন্তু যুব সমাজও এই রোগে অধিকতর আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ধূমপান করেন এমন ব্যক্তিদের ৮০% এই রোগে আক্রান্ত হন, আর বাকি ২০ শতাংশ অন্য যে কোনও কারণে হতে পারেন। তবে এ রোগে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা সচেতন থাকা এবং যে কোনও ধূমপান থেকে বিরত থাকা।"