• ঝড়ের রাতে বারাসতে উত্তমকুমারের বাড়িতে বিপর্যয়, ভেঙে পড়ল মহানায়কের স্মৃতিবিজড়িত গাছ...
    আজকাল | ০২ মে ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর আগেই জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে উত্তর ২৪ পরগনা-সহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সেই ঝড় বৃষ্টির ব্যাপকতা যে উত্তমকুমারের পরিবারের উপর পড়বে, তা কেউ কখনও ভাবেননি। বাসিন্দাদের মন খারাপ। কালবৈশাখী দাপটে মহানায়কের স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন অশ্বত্থগাছ পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের শীতলা মন্দিরও।

    উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতের দক্ষিণপাড়ার শীতলাতলায় উত্তমকুমারের আদি নিবাস। মহানায়কের শৈশব সেখানেই কেটেছে। ‌ভাই তরুণকুমারও শীতলতলার বাড়িতেই থাকতেন। উত্তমকুমার ও তরুণকুমার এই বাড়ি থেকে টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় যেতেন। শুটিং সেরে আবার রাতে বারাসতের বাড়িতে ফিরে আসতেন। পরে অবশ্য মহানায়ক ও তাঁর ভাই কলকাতায় থাকা শুরু করেন। বারাসতের দক্ষিণপাড়া শীতলাতলায় তবু আজও উত্তমকুমারের স্মৃতি ঘোরাফেরা করে। বাসিন্দারা উত্তমকুমারকে নিয়ে গর্ব করেন। 

    বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে তুমুল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। বারাসতের কয়েকটি ওয়ার্ডে কালবৈশাখী ঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কয়েকটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার মধ্যে রয়েছে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়া শীতলাতলাও। সেখানেই মহানায়ক উত্তমকুমারের আদি নিবাস। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বহু বছর আগে ওই শীতলতলাতেই মহানায়কের পরিবার শীতলা মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। নিয়ম করে প্রতিবছর বৈশাখ মাসে ওই মন্দিরে শীতলা পুজো হয়। ওই শীতলা মন্দিরের গায়েই রয়েছে শতবর্ষ প্রাচীন এক অশ্বত্থ গাছ। ওই অশ্বত্থগাছের তলায় ছেলেবেলায় উত্তমকুমার ও তরুণকুমার পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলা করতেন। বৃহস্পতিবার রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে উত্তমকুমারের স্মৃতি বিজড়িত সেই গাছ পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। 

    শুক্রবার বারাসতের দক্ষিণপাড়ার শীতলা মন্দিরে বাৎসরিক পুজো হওয়ার কথা ছিল। পুজোয় উত্তমকুমারের পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের বেশ কয়েকজনের আসারও কথা ছিল। কিন্তু কালবৈশাখী ঝড়ে অশ্বত্থগাছ ও মন্দির পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। খবর পাওয়ার পর বারাসতের পুরপ্রধান অশনি মুখোপাধ্যায়-সহ স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকরা রাত জেগে সেই গাছ কেটে মন্দির মেরামতের চেষ্টা শুরু করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ওই মন্দিরে পুজো করার মতো আর পরিস্থিতি নেই। জলে-ফুলে কোনওরকমে এবার পুজো হবে। পুরপ্রধান অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, 'দক্ষিণপাড়ার শীতলা মায়ের মন্দির ও অশ্বত্থগাছের সঙ্গে উত্তমকুমার ও তাঁর পরিবারের লোকেদের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে সেই গাছ ও মন্দির ভেঙে পড়েছে। ওই অশ্বত্থগাছ ও মন্দির ঘিরে বাসিন্দাদের একটা আবেগ রয়েছে। কালবৈশাখীর ঝড়ে ইতিহাসের সেই স্মৃতি মুছে গেল।' 

    মহানায়কের পরিবার মন্দির নতুন করে নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাতে বারাসতের বাসিন্দারা খুশি। মন্দির হয়তো আবার গড়ে উঠবে। কিন্তু মহানায়কের স্মৃতি বিজড়িত সেই অশ্বত্থ গাছ আর ফিরে পাওয়া যাবে না।
  • Link to this news (আজকাল)