শ্রীকান্ত ঠাকুর: এতদিন যা ফেলে যাওয়ার বস্তু ছিল এখন তা বিকল্প আয়ের সন্ধান দিয়েছে বালুরঘাটের একশ্রেণীর মানুষকে। বাজারের নোংরা আবর্জনার মধ্যে পড়ে থাকা মাছের আঁশ এখন উপার্জনের মাধ্যম। আত্রাই নদীর পাড়ে গেলেই দেখা যায় মাছের আঁশ শুকাতে ব্যস্ত একদল মানুষ। কারণ এখন এটাই তাদের জীবিকা। বারাসাত থেকে ক্রেতারা এসে এই শুকনো পরিষ্কার মাছের আঁশ কিনে নিয়ে যায়। চাহিদা ও আকাশ ছোঁয়া। ছোট বড় বিভিন্ন আকারের মাছের আঁশ আলাদা আলাদা করে শুকিয়ে তারপরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায়। প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিকোচ্ছে আঁশ। যার ফলে একদিকে যেমন বর্জ্য পদার্থের পুনঃ ব্যবহার হচ্ছে তেমনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছে মাছের বাজার।
মাছের আঁশ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ফুড সাপ্লিমেন্ট থেকে নেল পেইন্ট, এমনকি রকমারি চুমকি তৈরির ক্ষেত্রে কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগছে আঁশ। বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীর মাছের আঁশ বিক্রি করেই আয়ের পথ খুঁজে পাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। নদীর পাড়েই সারিসারি শোকানো চলছে আঁশ। তারপরে সেগুলো পাড়ি দিচ্ছে ভিন জেলায়। এভাবেই মৎস্যজীবীরা খুঁজে নিচ্ছে আয়ের নতুন দিশা। এর ফলে মাছ বাজারও থাকছে পরিষ্কার। কিছুই যে ফেলনা নয়, তা প্রমাণ করছে বালুরঘাটের ধীবর গোষ্ঠী।
'যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই,পাইলে পাইতে পার অমূল্য রতন।' এবার হাতে গরম প্রমাণ মাছের আঁশ। মাছ বাজারে ঢুকলে হামেশাই দেখা যায় মাছের আঁশের অবহেলিত রূপ। কোথাও নর্দমার জলে ভেসে যাচ্ছে, তো কোথাও ডোবায় পচে যাচ্ছে এই 'অমূল্য রতন'। কিন্তু সেই মাছের আঁশ দিয়েই যে ব্যবসার নতুন পথ খুলে যেতে পারে তাই সত্যি করে দেখালেন বালুরঘাটের মৎস্যজীবীরা। উদ্যোগপতিদের কাছে হয়ত তারাই এখন 'এন্টারপ্রেনার'। তাইতো কলকাতা থেকে উদ্যোগপতিরা এসে বালুরঘাটের আত্রেয়ী পাড়ের মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে কুইন্টাল কুইন্টাল মাছের আঁশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যা একাধিক প্রক্রিয়া পার করে বিভিন্ন কাজের জন্য দেশের বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে।
আত্রেয়ী নদীর মাছের স্বাদ নামকরা। নদীর বড় মাছের আঁশও মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানের হদিস দিচ্ছে। বর্তমানে নদীর পাড়ের প্রায় ১০ টি মৎস্যজীবী পরিবার। মাছের আঁশ শুকিয়ে বাড়তি আয় করছেন। নদীর পাশে দেখা যাচ্ছে তারা মূলত রুই ও কাতল মাছের আঁশ শুকোতে দিচ্ছেন। সারাদিন শুকানোর পরে তারা এক জায়গায় করে বিকেল নাগাদ তুলে নিচ্ছে। তারপরে প্রায় ১০ কুইন্টাল শুকনো আঁশ জমা হলে কলকাতা থেকে উদ্যোগপতিরা এসে তা সংগ্রহ করছেন। ট্রাক করে মাছের আঁশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কলকাতায়। যেখানে প্রক্রিয়াকরণ করে গুড়ো করা হয় আঁশগুলোকে। তারপর পালিশ করা হয় অথবা বিভিন্ন পাউডার লাগিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। সেখান থেকেই ক্রমশ তৈরি হয় ফুড সাপ্লিমেন্ট, নেইল পেইন্ট, চুমকি সহ আরো কত কি! প্রথমে একজন এই কাজ শুরু করলেও এখন সেই সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি কুইন্টাল আঁশের দাম চার হাজার টাকা। কখনও দাম বেড়েও যায়।