অয়ন ঘোষাল: বুধবার দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পরই সস্ত্রীক জগন্নাথ ধামে উপস্থিত হয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নয়া বিতর্ক যোগ করেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। একদিকে রাজ্য বিজেপি জানিয়েছে, তাঁরা দিলীপ ঘোষের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন না। এটা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আরও একধাপ এগিয়ে দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করেছেন দলবদলু সৌমিত্র খাঁ। পালটা জবাব দিয়েছেন দিলীপও। এরপর এদিন ফের বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ। সজল ঘোষ থেকে অর্জুন সিং, এদিন দিলীপের নিশানায় একাধিক নেতা। বিয়ে থেকে রাজনীতি, খোলা ব্যাটে জবাব দিলেন তিনি।
সজল ঘোষ বলছেন দিলীপ ঘোষের এখন বেশি ঘনিষ্ঠ কুণাল ঘোষ
কেন সজল আমার ঘনিষ্ঠ নয়? আমার সঙ্গে কুণাল ঘোষ ফটো তোলে। সজল ঘোষ ফটো তোলে। আমি সবাইকে ঘনিষ্ঠ মনে করি। কেউ যদি সময় সময় আমার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় সেটা তার ব্যাপার। আমার কাউকে নিয়ে কোনো অ্যালার্জি নেই। কে চোর কে ডাকাত সেটা নিয়েও আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। যারা কাল পর্যন্ত চোর ডাকাতের সঙ্গে ছিল তারা আজ সতী হয়ে যাচ্ছে। দিলীপ ঘোষ যাকে একবার বন্ধু মনে করে তাকে শেষ দিন পর্যন্ত বন্ধু মনে করে। কাল যারা তৃণমূলে শত্রু ছিল তারা বন্ধু হয়েছে। আমি তাদের বন্ধু বলেই মনে করি।
অর্জুন বলেছেন সোমেন এবং শিখা মিত্রের অবস্থা হবে আপনার আর বৌদির
আমি ২০১৫ সাল থেকে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে লড়াই করছি। তখন এই নেতা মমতা ব্যানার্জির কোলে খেলা করতেন। তার বাড়িতে গিয়ে উচ্ছিষ্ট খেতেন। বাড়ির সামনে লাইন দিয়ে বসে থাকতেন। এখন হঠাৎ বিজেপি হয়েছেন। এরকম যারা হঠাৎ বিজেপি হয়ে লাফাচ্ছেন, তারা সকালে বিজেপিতে প্রাতরাশ করেন। তৃণমূলের বাড়িতে লাঞ্চ করেন। আবার রাতে বিজেপিতে ফিরে এসে ডিনার করেন। দিলীপ ঘোষের দিকে কেউ আঙুল তুলে এইকথা বলতে পারবে? দিলীপ ঘোষ এখন দলে চার আনার ফ্রি মেম্বার। তার কোনও পদ নেই। কিন্তু দিলীপ ঘোষ বিজেপিতে আছে। কারুর টিকিট চলে যেতে বা চাকরি চলে যেতে একেবারে ইঁদুরের মতো হুহু করে বিজেপি ছেড়ে চলে গেছিল। আবার হাওয়া ঘুরতে হুহু করে ফিরে আসছে। তারা যেন দিলীপ ঘোষের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট না দেয়।
এই মমতা ঘনিষ্ঠতা কি অন্য কোনও রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত?
যারা এইসব বিশ্লেষণ করছেন তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ওরকমই। এদের অনেকে আমার পিছনে ঘুরঘুর করত। ১ লাখ ২ লাখ টাকার জন্য ঘুরত। কেউ আমার বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছিল। কেউ আমার উপদেষ্টা হয়ে গেছিল। আবার জমা পাল্টে এখন আমাকে উপদেশ দিচ্ছেন। এরা সব অন্ন দাস। আর দিলীপ ঘোষ বুক ফুলিয়ে ঘুরবে। কারণ দিলীপ ঘোষ কারোও সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে চলে না। যারা এখন টিভি তে এই কথা শুনছেন তাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ করছি, পারলে প্রমাণ দিন দিলীপ ঘোষ কখনও কোনওদিন কোনও তৃণমূল নেতাকে ফোন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ছেড়ে দিন। তারা দরকার হলে দিলীপ ঘোষকে ফোন করেছে। কেউ বলতে পারবে না আমি কোনও অ্যাপের মাধ্যমে গোপনে ফোন করেছি। বা রাতের বেলা কালীঘাটের বাড়ি গেছি। দিলীপ ঘোষ লড়াই করেছিল। লড়াই করবে। দিলীপ ঘোষ বিজেপিটা বোঝে। যারা আজ হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই বলছে তারাই একটা হিন্দু মন্দির থেকে হিন্দুদের আলাদা করছে? বিজেপি তাই বলেছে কোনোদিন? কাশী বিশ্বনাথ মন্দির মোদী জি তৈরি করেছেন। কেউ বলেছে ওটা মোদীর মন্দির? আমি বলছি ওই জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে যদি কেউ মাথা নত করে তাহলে সে তৃণমূল হয়ে যাবে? মানুষকে এতো বোকা ভাবেন আপনারা? সিপিএম একসময় বলতো ওই বিবেকানন্দ আর এই বিবেকানন্দ। ওটা নাকি আরএসএস এর বিবেকানন্দ। তৃণমূল বলতো রামায়ণের রাম আলাদা আর বিজেপির রাম আলাদা। আমরা সেটা মনে করি না। পুরীর জগন্নাথ আর দীঘার জগন্নাথ এক। যার যেখানে ইচ্ছা গিয়ে প্রণাম করবেন। সবাই বলে বিজেপি মন্দির রাজনীতি করে। একশো বার করে। কিন্তু মন্দিরে মন্দিরে ভেদাভেদ করে না। এরকম করলে বিজেপিকে হিন্দু মানুষ ভোট দেবে?
বিয়ের পর আপনি নমনীয় হয়ে গেছেন?
অনেক ধারণাই ভুল মানুষের। এটাও ভুল প্রমাণিত হবে।
সৌমিত্র খাঁ ইস্যু
ওকে অনেকে এইসব কথা বলাচ্ছে। তার বউ বলেছে ওর কোনো বুদ্ধি নেই। আমি বলি নি। তার জীবন দেখুন। সে কটা পার্টি করেছে? গোটা রাত কারুর সঙ্গে বিছানায় কাটিয়ে সকালে গঙ্গা স্নান করে বলছে আমি সতী। এরকম অনেক নেতাকে আমরা বাড়িতে পুষে রেখেছি। কাল যদি পোষা বন্ধ করি সব ওইদিকে লাইন লাগাবে। তারা বিজেপির পোষ্য। দিলীপ ঘোষকে জ্ঞান দিতে আসবেন না। রোজ যে বিছানা পালটায় সে যেন দিলীপ ঘোষকে জ্ঞান না দিতে আসে। দিলীপ ঘোষ খালি হাতে রাজনীতিতে এসেছে। খালি হাতে চলে যাবে। মাথা উচু করে রাজনীতি করে চলে যাবে। সৌমিত্র খাঁ এঠোকাটা খেয়ে জীবন কাটিয়েছেন। সেও নেতা? তাঁর কথার কী গুরুত্ব? সে পরশু শুভেন্দু অধিকারীকে গালাগাল দিয়েছে। কাল সুকান্ত মজুমদারকে গালাগাল দিয়েছে। ওর বাপ কে? ওকে জিজ্ঞাসা করুন।
সিতাই পার্টি অফিসে দিলীপ পন্থীদের ওপর আক্রমণ হয়েছে
আমার পন্থী কেউ নেই। আমি বিজেপি পন্থী। আমি সভাপতি ছিলাম। লোক আমার সঙ্গে ঘুরত। আমি এখন কেউ নই কিন্তু আমাকে লোক নেতা মনে করে, তাই আমার সঙ্গে ঘোরে। আমি মালদহ মুর্শিদাবাদ গিয়ে সভা করে এসেছি। আর কারুর ক্ষমতা আছে সভা করার। আমি সভাপতির নির্দেশে গেছি। মুর্শিদাবাদ এর লোক আমাকে ডেকেছে। কারণ তারা আমাকেই হিন্দুদের নেতা মনে করে। কারুর দম আছে জঙ্গিপুর গিয়ে সভা করার? দিলীপ ঘোষ করে এসেছে। কে আসল হিন্দু নেতা সেটা পাবলিক জানে। রাতারাতি হিন্দু নেতা হতে যেও না। হিন্দুত্ব সবাইকে ফিট করে না।