বিক্রম রায়, কোচবিহার: ঘরের দেওয়ালের রং মলিন হয়েছে অনেক দিন। বাড়ির কর্তা বেশ কয়েক বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে ওই বাড়িতে মা-ছেলের সংসার। সেই বাড়িতেই শুক্রবার সকাল থেকে আনন্দ, হইচই। হবে নাই বা কেন? ছেলে দেবাঙ্কন দাস এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্ভাব্য নবম স্থান অধিকার করেছে। আর সেই খবর শোনার পর থেকে মায়ের চোখে আনন্দের কান্না। তার এই সাফল্যে মায়ের অবদান সব থেকে বেশি। সেই কথা জানিয়েছেন, দেবাঙ্কন। বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে আসছেন গৃহশিক্ষকরা থেকে প্রতিবেশীরা।
আজ শুক্রবার রাজ্যের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল (Madhyamik Result 2025) প্রকাশিত হয়েছে। সম্ভাব্য মেধা তালিকায় নবম স্থানে আছে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দেবাঙ্কন দাস। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭। তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের ছাত্র সে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবি দেবাঙ্কন পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী। স্কুলেও বরাবর ভালো নম্বর পেয়ে এসেছে। বাবা নিবারণ দাস স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। দেবাঙ্কন তখন ষষ্ট শ্রেণির ছাত্র। মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় বাবা মারা যান। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল মা জয়ন্তী দাসের। তিনি প্রথম থেকেই গৃহবধূ ছিলেন। ফলে কীভাবে সংসার চলবে? ছেলেকে কীভাবে বড় করবেন? সেই দুশ্চিন্তায় ছলেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর পেনশনের টাকা ও সঞ্চিত অর্থ দিয়েই সংসার চালাতে শুরু করেন তিনি। সেভাবেই এখনও সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন জয়ন্তী দাস।
নিজে খুব একটা বেশি পড়াশোনা করেননি। তবে প্রতিকূলতার মধ্যেও ছেলের পড়াশোনার কোনও খামতি রাখতে দেননি। ছেলের পড়াশোনার জন্য গৃহশিক্ষকও রেখেছিলেন। স্কুলের শিক্ষকরাও দেবাঙ্কনকে পড়াশোনায় সাহায্য করতে থাকেন। কখনওই ঘড়ি ধরে পড়াশোনা করে না দেবাঙ্কন। যখন ইচ্ছে হয়, বইপত্র নিয়ে পড়তে বসে। ছেলের পড়াশোনার সময় তার পাশে সবসময় বসে থাকতেন মা। ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত জয়ন্তী দাস। ফল জানার পর ছেলেকে মিষ্টি খাইয়েছেন। মায়ের চোখে আনন্দের কান্না। দেবাঙ্কনের সাফল্য শুনে বাড়িতে এসেছেন গৃহশিক্ষকরা। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে আসছেন।
এই সাফল্যের কৃতিত্ব পুরোটাই মাকে দিয়েছে দেবাঙ্কন। এরপর বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে। আগামী দিনে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সে। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলতেও ভালোবাসে। তার সাফল্যে স্কুলের শিক্ষকরাও আনন্দিত।