• বন্যপ্রাণের তথ্য জানা আরও সহজ, চলতি মাসেই চালু আলিপুরের চিড়িয়াখানার ডিজিটাল লাইব্রেরি
    প্রতিদিন | ০২ মে ২০২৫
  • নিরুফা খাতুন: এবার ঘরে বসে আলিপুর চিড়িয়াখানার গ্রন্থাগার ব‌্যবহার করতে পারবেন পাঠকরা। সেজন‌্য চিড়িয়াখানার ওয়েবসাইটে গিয়ে লগ ইন করতে হবে পাঠকদের। দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে আলিপুর চিড়িয়াখানার গ্রন্থাগারকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ১৩১৬ দুষ্প্রাপ‌্য বই ও ১৫১৬টি গুরুত্বপূর্ণ তথ‌্য নিয়ে চালু হচ্ছে ডিজিটাল লাইব্রেরি। এই মাসে চালু হচ্ছে এই গ্রন্থাগার। আলিপুর চিড়িয়াখানার গ্রন্থাগারে সাধারণ মানুষের প্রবেশ ছিল না। গবেষণারত ছাত্রছাত্রীদের অনুমতি থাকলেও তাঁদের লাইব্রেরিতে বসেই পড়াশোনা করতে হত। এখন চিড়িয়াখানা ভ্রমণের পাশাপাশি এই গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতে পারবেন দর্শকরাও। সেখানে কম্পিউটারে বসে ডিজিটাল লাইব্রেরি থেকে বই পড়তে পারবেন।

    আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ‌্যায় বলেন, ‘‘গ্রন্থাগার ডিজিটাইজ করার পর সাধারণ মানুষকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বইপ্রেমী বা পাঠকরা এখন গ্রন্থাগারে কম্পিউটারে বসে বই পড়তে পারবেন। তবে গবেষণা করছেন যাঁরা, তাঁরা এতে খুবই  উপকৃত হবেন। কারণ, এতদিন এখানে তাঁদের বসে পড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু বই বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। ডিজিটাল লাইব্রেরি হওয়ায় তাঁরা এখন ঘরে বসেও পড়াশোনা করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় তথ‌্য কপি করে রাখতে পারবেন।’’ চিড়িয়াখানার বন‌্যপ্রাণীদের দেখতে দর্শকদের ভিড় লেগে থাকে। এখন লাইব্রেরিতে ছাড় মেলায় বন‌্যপ্রাণীদের সম্পর্কে জানতে আরও বেশি সংখ‌্যক দর্শক ভিড় জমাবে বলে মনে করছে আলিপুর কর্তৃপক্ষ।

    দেশের প্রথম চিড়িয়াখানা আলিপুর। ১৮৭৫ সালে এটি চালু হয়েছিল। সেই সময় কিছু হরিণ, ভেড়া, আফ্রিকান মোষ, বানর নিয়ে খোলা হয়েছিল এই চিড়িয়াখানা। ধীরে ধীরে এখানকার আবাসিকদের সংখ‌্যা বাড়তে থাকে। এই চিড়িয়াখানার প্রথম সুপারিন্টেন্ডেট রায় বাহাদুর রাম ব্রহ্ম সান‌্যাল। বন‌্যপ্রাণীরা জঙ্গল থেকে চিড়িয়াখানায় আসার পর তাদের জীবনযাত্রার কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, চিড়িয়াখানার পরিবেশে তারা কতটা খাপ খাওয়াতে পারছে তা পর্যবেক্ষণ করতেন। পশুপাখিদের খাঁচায় কীভাবে রাখা হবে, তাদের খাদ্যাভ‌্যাস, প্রজননকালে আচরণ এবং তাদের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে বাহাদুর রামব্রহ্ম সান‌্যাল প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করতেন এবং সেগুলি লিপিবদ্ধ করতেন।

    পরবর্তীকালে ‘এ হ্যান্ডবুক অফ দ্য ম্যানেজমেন্ট অফ ওয়াইল্ড অ্যানিম্যালস ইন ক্যাপ্টিভিটি ইন লোয়ার বেঙ্গল’ নামে একটি বইও লেখেন তিনি। ১৮৯২ সালে ওই বই প্রকাশিত হয়। সেই দুষ্প্রাপ্য বইয়ের প্রতিলিপি এই গ্রন্থাগারে রয়েছে। সেই সময় তাঁর হাতের লেখা চিঠিও রয়েছে এখানে। এছাড়া কোনও পশুপাখি কবে কোথা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে, তার সব তথ‌্য এই লাইব্রেরিতে রয়েছে। একসময় পোলার বিয়ার এই চিড়িয়াখানার বাসিন্দা ছিল। এই চিড়িয়াখানায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এবং আফ্রিকান সিংহের প্রজননের মাধ্যমে টাইগন ও লিটিগন নামক সংকর প্রজাতির প্রাণীর জন্ম হয়েছিল। আলিপুরের এই কর্মকাণ্ডে বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। অবশ‌্য তারা কেউ আর বেঁচে নেই। এরকম হারিয়ে যাওয়া চিড়িয়াখানার আবাসিকদের সম্পর্কেও বহু তথ‌্য এই ডিজিটাল গ্রন্থাগারে পাওয়া যাবে। অরুণবাবু জানান, এরকম অনেক দুষ্প্রাপ‌্য বই, তথ‌্য সংরক্ষণ করতে ডিজিটাইজড করা হয়েছে। এতে দর্শকদেরও চিড়িয়াখানার প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়বে। ডিজিটাল গ্রন্থাগার থেকে দর্শকরা চিড়িয়াখানার অনেক অজানা তথ‌্য জানতে পারবেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)