• সুগারের ভয়, গেরস্থের হেঁশেল থেকে উধাও চিনি, তলানিতে বিক্রি
    প্রতিদিন | ০২ মে ২০২৫
  • নব্যেন্দু হাজরা: মনে সুগার আতঙ্ক। আর সেই আতঙ্কেই চিনি থেকে দূরে আম গেরস্থ। মিষ্টির দোকানে সুগার ফ্রি মিষ্টির চাহিদা, চায়ের দোকানেও চিনি ছাড়া চায়ে ঝোঁক। এমনকী সুগার ফ্রি বিস্কুটও বিকোচ্ছে দেদার। দুধ বা হেলথ ড্রিংকসেও চিনি এড়াচ্ছেন বেশিরভাগ। ফলশ্রুতি! যে সংসারে আগে পাঁচ কেজি চিনি লাগত, তিনিই এখন কিনছেন দু’কেজি।
    “সুগার হলে তো রক্ষে নেই। তাই যতটা মিষ্টি এড়ানো যায়!”- বলছেন বাঘাযতীনের মুখার্জি গিন্নি। আর সাধারণ মানুষ মিষ্টি থেকে মুখ ফেরানোতেই পোস্তার পাইকারি বাজারে দিন দিন কমছে চিনির চাহিদা।

    পোস্তা বাজারে যেখানে বছর পাঁচেক আগেও ৩৫-৪০টা বড় বড় চিনির পাইকারি দোকান ছিল, সেখানে এখন রয়েছে মেরেকেটে পাঁচটা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনও চাহিদা নেই চিনির। দাম কমা-বাড়া কোনও কিছুতেই তাঁদের কিছু যায়-আসে না। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে চিনির দোকান বদলে অন্য মুদির দোকান দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের কথায়, চিনি মূলত আসে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ থেকে। মালগাড়িতে করে আসে। এরাজ্যে ডানকুনি, শালিমার এবং চিৎপুর ইয়ার্ডে চিনি এসে নামে। কিন্তু বছর কয়েক হল চিনির চাহিদা এতটাই কমেছে যে, চিৎপুর এবং শালিমারে এখন আর চিনি আসেই না। শুধু আসে ডানকুনিতে। সেখান থেকেই বিভিন্ন পাইকারি বাজারে ট্রাকে করে তা চলে যায়। পোস্তা বাজারের চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, বছর পনেরো আগে দিনে যেখানে ১০০ ট্রাক চিনি আসত বাজারে, সেখানে এখন বড়জোর দুই ম্যাটাডর আসে। এতটাই কমেছে চিনির চাহিদা।

    কিন্তু কারণ কী শুধুই সুগারের আতঙ্ক? চিকিৎসকরাও বলছেন, একবার সুগার হয়ে গেলে তা থেকে একাধিক রোগের জন্ম হয়। তাই সাধারণ মানুষ এখন চিনি থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আগে যে পরিমাণ মানুষ মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনতেন, তাতেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এসেছে। এই নিয়ন্ত্রণ যে শুধু বয়স্ক মানুষের মধ্যেই এসেছে, তেমনটা নয়। এসেছে নতুন প্রজন্মের মধ্যেও। তাঁরা শরীর সম্পর্কে প্রচন্ড সচেতন। তাই কোনও অসুখ শরীরে বাসা বাঁধার আগেই তাঁরা খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনছেন। বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, এতে প্রমাণিত মানুষ কতটা সচেতন হয়েছে। চিনি খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। সুগার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। মানুষ যদি কম খান, তা তো তাঁর শরীরের পক্ষেই মঙ্গল।

    ওয়েস্ট বেঙ্গল ভেন্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “আগের থেকে চিনির বিক্রি অনেকটাই কমেছে পাইকারি বাজারে। মানুষ সুগার হওয়ার আশঙ্কায় চিনি কম খাচ্ছেন বলেই হয়তো ব্যবসার এই অবস্থা। অনেকেই দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।” চিনি উৎপাদনে দেশের বৃহত্তম রাজ্য মহারাষ্ট্র। সেখানেও চিনি উৎপাদন অনেকটাই কমেছে। উৎপাদন ধাক্কা খেয়েছে আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য কর্নাটকেও। সূত্রের খবর, উৎপাদন কমার অন্যতম বড় কারণ বহু চিনিকল বন্ধ থাকা। আর তার মূল কারণ গত কয়েকবছর ধরে চিনির চাহিদা কমে যাওয়া।
  • Link to this news (প্রতিদিন)