• ওড়িশায় বাংলার শ্রমিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে শাহকে চিঠি ইউসুফ পাঠানের, চার দফা দাবি বহরমপুর-সাংসদের
    আনন্দবাজার | ০২ মে ২০২৫
  • ওড়িশায় পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ‘ধারাবাহিক এবং পরিকল্পিত’ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি পাঠালেন বহরমপুরের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে কড়া ভাষায় লেখা চিঠিতে তিনি অবিলম্বে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, আক্রান্ত ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষায় চার দফা দাবির কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে পদক্ষেপ করার কথা বলেছেন এই ক্রিকেটার রাজনীতিক। ঘটনাচক্রে যে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছেন ইউসুফ, সেই অধীরও একই ইস্যুতে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি এবং গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলকে চিঠি দিয়েছেন।

    ওই চিঠিতে ইউসুফ অভিযোগ করেছেন, বিজেপি-শাসিত ওড়িশায় সরকার গঠনের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের ওপর হামলা শুরু হয়েছে। এই শ্রমিকদের মধ্যে বেশ কিছু তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বহরমপুরের বাসিন্দা। ইউসুফ লিখেছেন, “রাতের অন্ধকারে শ্রমিকদের ওপর হামলা হচ্ছে, তাদের মোবাইল ফোন এবং খেটে রোজগার করা উপার্জন লুট করা হয়েছে, আধার কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং জোর করে থাকার জায়গা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘২০২৪ সালের অগস্ট-সেপ্টেম্বরে একই ধরনের হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। এ বারে নতুন করে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।’’ ধর্মীয় এবং আঞ্চলিক পরিচয়ের ভিত্তিতে শ্রমিকদের নিশানা করার অভিযোগ করেছেন সাংসদ ইউসুফ। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের সংবিধানে একতা, সংহিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের যে মৌলিক নীতির কথা বলা আছে, এই ঘটনা তার পরিপন্থী।’’

    চিঠিতে এই সমস্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চারটি দাবি উত্থাপন করেছেন বহরমপুরের ক্রিকেটার সাংসদ। প্রথমত, ওড়িশা প্রশাসনকে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়ার দাবি করেছেন। দ্বিতীয়ত, আক্রান্ত শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন। তৃতীয়ত, ঘটনার তদন্তে একটি কেন্দ্রীয় অনুসন্ধানকারী দল গঠন করে অবিলম্বে তদন্তের দাবি করেছেন। চতুর্থত, ফিরে আসা শ্রমিকদের জন্য ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। চিঠির শেষাংশে তিনি লিখেছেন, “এটি শুধুই আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়, এটি মানবিক মর্যাদা এবং দেশের যে কোনও প্রান্তে কাজ করার সাংবিধানিক অধিকারের প্রশ্ন।” তিনি এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছেন।

    ঘটনাচক্রে, মুর্শিদাবাদে গোষ্ঠী সংর্ঘষের ঘটনার সময় ইউসুফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী রাজনৈতিকগুলি। তাই বাংলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, সেই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরেই সজাগ হয়ে গিয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ। তাই দলের সঙ্গে যাবতীয় তথ্য নিয়েই তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন শাহকে। তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব আবার পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে অধীরের সক্রিয়তাকেই ইউসুফের চিঠি দেওয়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করছেন। কারণ পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং মুর্শিদাবাদে অশান্তির পরে বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগে সরব হয়েছেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর। এই পরিস্থিতিতে বাংলার শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে সোমবার ওড়িশা এবং গুজরাতের বিজেপির দুই মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখেছেন। তাই কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, অধীরের চাপেই শাহকে চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছেন ইউসুফ। তবে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শাহকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল ২৭ এপ্রিল, তবে তা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে শুক্রবার। আর অধীর চিঠি পাঠিয়েছিলেন ২৮ এপ্রিল। তাই কংগ্রেসের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

    তবে বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্র বলেন, ‘‘অধীর চৌধুরী এবং ইউসুফ পাঠানের এখন আর কোনও কাজ নেই। মুর্শিদাবাদে মানুষ খুন হলে, ঘরছাড়া হলে, এরা চোখে দেখতে পান না। আর পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভিন্‌রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বলেই এরা শাহকে চিঠি লিখছেন। ভিন্‌রাজ্যে শ্রমিকেরা কেন বাংলা থেকে কাজ করতে যাচ্ছে ইউসুফ পাঠান কি তা জানেন?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আসলে ধর্মীয় তুষ্টিকরণের রাজনীতি করে অধীর-ইউসুফ উভয়ই সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমি বলছি না কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে কোনও ঘটনা ঘটেনি। ঘটলে তা নিন্দনীয়। কিন্তু বহরমপুরের প্রাক্তন ও বর্তমান সাংসদ যদি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুরে যখন মানুষ খুন হয়েছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, তার বিহিত চেয়ে সরব হতেন, তা হলে আমি অবশ্যই মনে করতাম, তাঁদের নিরপেক্ষ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ আছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)