• সাইকেল মালিকের নামে ছুটছে গাড়ি, বেনামে হাতবদল বন্ধ হবে কবে?
    আনন্দবাজার | ০২ মে ২০২৫
  • স্কুটার বদলে কেনা হয়েছিল গাড়ি। সর্বসাকুল্যে দাম উঠেছিল ৩০ হাজার টাকা! এই দামে গাড়ি হয় নাকি? বিক্রেতা শর্ত দিয়েছিলেন, এত কমে গাড়ি নিতে গেলে পাওয়া যাবে না বৈধ কাগজপত্র। এমন গাড়ি মিলবে, যার ফিটনেস শংসাপত্র বা দূষণ নিয়ন্ত্রণের শংসাপত্র নেই। সেই গাড়িই পথে নেমে ঝড়ের গতিতে চলতে গিয়ে উল্টে যায়। প্রাণ যায় ১৭ বছরের এক কিশোরের। গার্ডেনরিচের ওই ঘটনার তদন্তে নেমে গাড়িটির মালিক কে, বা গাড়িটি কত বার হাতবদল হয়েছে, সেই ধোঁয়াশা এখনও কাটাতে পারেনি পুলিশ।

    জানা যাচ্ছে, গাড়িটি সুলতান শেখ নামে এক জনের নামে নথিভুক্ত ছিল। আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের (আরটিও) নথি অনুযায়ী, সুলতানের ঠিকানা দেওয়া ছিল দক্ষিণ কলকাতার বেচারাম চ্যাটার্জি রোড। কিন্তু, সেই ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ দেখে, সেখানে সুলতান নামে কেউ থাকেন না। এর পরে আরটিও-র নথির সূত্রে পাওয়া একটি নম্বরে ফোন করে পুলিশ। ফোনটি ধরেন সমীর ঘোষ নামে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তাঁর ঠিকানা মিলে যায় আরটিও-র দেওয়া ঠিকানার সঙ্গে। কিন্তু সমীর দাবি করেন, তিনি কোনও দিন গাড়িই কেনেননি। তাঁর একটি সাইকেল আছে, সেটি বহু পুরনো।

    পুলিশ জানাচ্ছে, গত ১৮ এপ্রিল সুলতানের নামে নথিভুক্ত গাড়িটি উল্টে যায় গার্ডেনরিচ উড়ালপুলে। গাড়িতে ছিলেন ছ’জন। তার মধ্যে শুভম দাস নামে ১৭ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রোহিত আগরওয়াল নামে ১৯ বছরের এক তরুণ। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবারের খবর, রোহিত আপাতত জামিনে মুক্ত আছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, সুলতান নামে এক ব্যক্তি গাড়িটি প্রথমে কেনেন। এর পরে তিনি সেটি বিক্রি করে দেন। সেই হাত ঘুরে রোহিতের কাছে গাড়িটি পৌঁছয়। মাঝে আরও কেউ গাড়িটি কিনেছিলেন কিনা, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা এখনও পায়নি পুলিশ।

    রোহিতের বাবার অবশ্য দাবি, ছেলে যে গাড়ি কিনেছে, তা তিনি জানতেনই না। নিজের স্কুটার বদলে রোহিত গাড়িটি নিয়েছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে গাড়ির প্রথম মালিক সুলতানকেও মামলায় যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশের দাবি, এই ঘটনাই প্রমাণ করছে, বার বার সচেতনতার প্রচার সত্ত্বেও গাড়ি হাতবদলের সময় মালিকের নাম বদল না করার প্রবণতা বন্ধ হয়নি।

    পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, গাড়ি হাতবদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মালিকের নামও বদল হওয়া প্রয়োজন। এর জন্য সম্প্রতি কঠোর আইন করা হয়েছে। হাতবদল হওয়ার পরে নাম বদল না হলে, সংশ্লিষ্ট গাড়ি যদি কোনও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তা হলে যিনিই অপরাধ করুন, মালিক হিসাবে যাঁর নাম থাকবে তাঁর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে পারবে পুলিশ।

    পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘গাড়ি বিক্রির সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিকে আরটিও অফিস থেকে ছাড়পত্র নিয়ে গাড়ি বিক্রি করতে বা কিনতে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গাড়ির মালিকের থেকে প্রথমে গাড়িটি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নামে বদল করিয়ে কিনতে হবে। এর পরে যাঁকে বিক্রি করা হচ্ছে, তাঁর নামে বদল করাবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। শেষে গাড়ির নতুন মালিকের নামে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট তৈরি হবে।’’ কিন্তু, গার্ডেনরিচের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এই সব নিয়মের কিছুই মানা হয়নি। জানা যাচ্ছে, গাড়িটির কোনও কাগজপত্র না থাকায় বিমাও ছিল না। ফলে, মৃত কিশোরের পরিবার এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)