• স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পালন চন্দননগরে, শহরকে হেরিটেজ ঘোষণার উঠল দাবি...
    আজকাল | ০৩ মে ২০২৫
  • মিল্টন সেন, হুগলি: সাড়ম্বরে পালিত হল চন্দননগরের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস। একই সঙ্গে উঠল শহরকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি। সাবেক ফরাসি উপনিবেশ স্বাধীন হয়েছিল ৭৫ বছর আগে, ২ মে। তাই শুক্রবার সাড়ম্বরে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হল চন্দননগরে। ভারতবর্ষ ব্রিটিশশাসন মুক্ত হয়েছিল, দেশ স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। স্বাভাবিক কারণে ওই দিনই দেশ জুড়ে পালিত হয়ে থাকে স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালে গোটা দেশ স্বাধীন হলেও, শুধুমাত্র চন্দননগর ছিল তখনও পরাধীন। ফরাসিদের দখলে ছিল গঙ্গা তিরবর্তী চন্দননগর। ১৯৫০ সালের ২ মে চন্দননগর থেকে ফরাসি শাসনের অবসান ঘটে। স্বাধীনতা লাভ করে চন্দননগর। 

    বহু ইতিহাসের সাক্ষী সেই শহরের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উদযাপন করছে চন্দননগর কলেজ এবং চন্দননগর কলেজের প্রাক্তনীদের অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন। কলেজের তরফে এদিন সকালে প্রভাত ফেরির মাধ্যমে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল, কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশীষ সরকার, কলেজের বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী এবং চন্দননগরের বহু বিশিষ্ট গুণিজন। 

    এই প্রসঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষ দেবাশীষ বাবু বলেছেন, সম্প্রতি চন্দননগর কলেজ এবং চন্দননগর কলেজ অ্যালুমনি এসোসিয়েশনের তরফে শহরকে হেরিটেজ নগরীর স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। 

    ইতিমধ্যেই চন্দননগর কলেজ বিল্ডিং-কে হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে চন্দননগর স্ট্র্যান্ড। জগৎ বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজো, বিশ্ববন্দিত আলো-সহ এমন অনেক জিনিসই যা চন্দননগরে রয়েছে। চন্দননগর কলেজের হেরিটেজ ভবনে রয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড রিসার্চ সেন্টার। তাই গোটা চন্দননগর শহরকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। ফরাসি শাসনকালে চন্দননগরের অনেক বিপ্লবী ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে আত্মগোপন করে থাকতেন। তাঁদের স্মৃতিবিজরিত নানা জিনিস, ফরাসি আমলের অনেক পুরনো জিনিস, নথি চন্দননগরের নাগরিকদের কাছে আছে। তাঁদের কাছে আবেদন করা হয়েছিল মিউজিয়ামে রাখার জন্য সেগুলি দিতে। যাতে সাধারণ মানুষ অনায়াসেই সেগুলি দেখতে পারে। সেই আবেদনে অনেকেই সারা দিয়েছেন। পঁচাত্তর বছরের বেশি যারা চন্দননগরে বসবাস করছেন, তাঁদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।

    চন্দননগর কলেজের প্রাক্তনীদের সাহায্যে চন্দননগর ও ডুপ্লে কলেজ নিয়ে বই প্রকাশ হয়েছে আগেই। এবার স্বাধীনতার প্ল্যাটিনাম জুবিলি উদযাপন চলছে। এদিন অধ্যক্ষ দেবাশীষ সরকার আরও বলেছেন, বৃহস্পতিবার চন্দননগর কলেজ, শালবনীর সরকারি ডিগ্রী কলেজ এবং খিদিরপুর কলেজ এই তিনটি কলেজ একত্রিত হয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সাইন্স এন্ড রিসার্চ-এর কাছে দিল্লিতে প্রজেক্ট প্রপোজাল জমা দেওয়া হয়েছে। যার আনুমানিক প্রজেক্ট খরচ দু'কোটি টাকা। এর ফলে হেরিটেজকে কেন্দ্র করে উপযুক্ত গবেষণার ক্ষেত্রে চন্দননগর কলেজ মুখ্য ভূমিকা নেবে। সঙ্গে থাকবে চন্দননগর কলেজের আলুমনি নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন এবং চন্দননগরের বিশিষ্ট নাগরিকরা।

    যদিও এই দিনটাকে চন্দননগরের স্বাধীনতা দিবস বলতে চাইছেন না চন্দননগরের ফ্রেঞ্চ মিউজিয়ামের ডিরেক্টর বাসবী পাল। তিনি জানিয়েছেন, এই দিনটাকে স্বাধীনতা দিবস বলা হলে একটা শৃঙ্খল বা পরাধীনতার কথা এসে যায়। ফরাসিদের সঙ্গে কিন্তু চন্দননগরের তেমন সম্পর্ক ছিলো না। সম্পর্ক ছিল খুবই মধুর। ওদের সঙ্গে ব্রিটিশদের কোনও তুলনা হয় না। ওরা ব্রিটিশদের শত্রু বলে আমাদের বন্ধু, এমন কথা না বলাই ভাল। কারণ, এই ফরাসডাঙ্গাতেই প্রথম বিপ্লব গড়ে উঠেছিল। বাসবী দেবী মনে করেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে ফরাসিদের পরোক্ষ মদত ছিল। বিপ্লবীরা চন্দননগরে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতেন। ১৯৫০ সালের ২ মে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল। আর সেটা হয়েছিল সম্প্রীতির সঙ্গে। তবে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট যখন দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তখন চন্দননগরে ফরাসি পতাকার পাশাপাশি ভারতের পতাকাও তোলা হয়েছিল।ছবি পার্থ রাহা।
  • Link to this news (আজকাল)