নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: এবারও মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল হতাশাজনক শিলিগুড়িতে। রাজ্যে সম্ভাব্য মেধা তালিকার প্রথম দশে কোনও পরীক্ষার্থী স্থান পায়নি। এনিয়ে স্কুলগুলির পঠনপাঠনের মান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। যদিও স্কুলগুলির দাবি, বিদ্যালয়ে পড়াশোনায় কোনও ত্রুটি থাকছে না। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলমুখী কম হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এদিকে, সামান্য নম্বরের জন্য সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে এখানে জোর বিতর্ক দানা বেঁধেছে। শিক্ষাদপ্তরের এক আধিকারিক অবশ্য সমগ্র বিষয় খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। দার্জিলিং জেলার সমতলভাগ শিলিগুড়ি নিয়ে গঠিত পৃথক শিক্ষা জেলা। এবার শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলা থেকে মধ্যমিক পরীক্ষায় দেয় ১৩ হাজার ৬৯০ জন ছাত্রছাত্রী। এর অধিকাংশ পাশ করলেও রাজ্যের সম্ভাব্য মেধা তালিকায় কোনও পরীক্ষার্থী স্থান পায়নি। এনিয়ে হতাশ অভিভাবকদের একাংশ স্কুলগুলির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের অভিযোগ, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রতি স্কুলগুলি সেভাবে নজর দিচ্ছে না। এজন্যই বেশ কয়েক বছর ধরে এখানকার কোনও ছাত্রছাত্রী সম্ভাব্য মেধা তালিকায় জায়গা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকেরও নজর দেওয়া উচিত। মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে অভিভাবকদের মতো হতাশ শিক্ষক শিক্ষিকারাও। তবে তাঁরা অভিভাবকদের অভিযোগ মানতে নারাজ। শহরে মেয়েদের নামী স্কুলগুলির মধ্যে শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুল অন্যতম। এবার এই স্কুল থেকে পরীক্ষা দেয় ৩০০ জন ছাত্রী। পাশ করেছে ২৯৭ জন। ৬৭৫ নম্বর পেয়ে স্কুলে সেরা হয়েছে মোহনা সেনশর্মা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অত্যুহা বাগচি বলেন, শহরে সম্ভবত আমাদের ছাত্রীরাই ভালো ফল করেছে। তবে দশম শ্রেণিতে ওঠার পরই ছাত্রছাত্রীরা স্কুলমুখী কম হচ্ছে। টিউশন নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। সম্ভবত এজন্যই ছাত্রছাত্রীরা জীবনের প্রথম সেরা পরীক্ষার টেকনিক্যাল দিক সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এজন্যই সামন্য কিছু নম্বরের জন্য সম্ভাব্য মেধাতালিকায় স্থান পাচ্ছে না ছাত্রছাত্রীরা। কাজেই স্কুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। শহরের আরএক নামী স্কুল শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুল। প্রায় দশ বছর আগে এই স্কুলের ছাত্রই মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছিল। ইদানিংকালে আর তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য মেলেনি। এবার এই স্কুল থেকে ৩২৮ জন ছাত্র পরীক্ষায় দেয়। এরমধ্যে পাশ করেছে ৩২২ জন। ৬৭৫ নম্বর পেয়ে স্কুলে সেরা হয়েছে তথাগত রায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল দত্ত বলেন, ছাত্রদের সাফল্যের জন্য শিক্ষকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কাজেই পঠনপাঠনের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। তবে ছাত্রদের প্রতি অভিভাবকদের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। ছাত্রদের আরও পড়তে হবে। জানার ইচ্ছা বাড়াতে হবে। তবেই সম্ভাব্য মেধা তালিকায় স্থন মিলতে পারে। এদিকে, এবার মাধ্যমিকে দার্জিলিং জেলা থেকে ছাত্র ৬৭৪৬ এবং ছাত্রী ৮১৯২ জন পরীক্ষা দেয়। যামধ্যে ছাত্র ৮৪.৩৯ এবং ছাত্রী ৮১.৮২ শতাংশ পাশ করেছে। কালিম্পং জেলা থেকে ছাত্র ১৪৯৯ এবং ছাত্রী ১৬৩৬ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। যারমধ্যে ছাত্র ৯৫ এবং ছাত্রী ৯৭.৪৩ শতাংশ পাশ করেছে। শিক্ষকদের একাংশ বলেন, শিলিগুড়িতে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের রমরমা। যার প্রভাবও মাধ্যমিকের রেজাল্টে পড়ছে।