• মাধ্যমিকে ইতিহাস গড়ল রায়গঞ্জ
    বর্তমান | ০৩ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: নজির গড়ল রায়গঞ্জের আদৃত। ৬৯৬ নম্বর পেয়ে এই প্রথম মাধ্যমিকের মেধাতালিকার এক নম্বরে স্থান অধিকার করল জেলা। এদিন ফল ঘোষণা হতেই সেই সাফল্যের জোয়ারে বাঁধ ভাঙল উচ্ছ্বাসের। আনন্দে উদ্বেল জেলার শিক্ষক, শিক্ষিকা থেকে সাধারণ মানুষ। অতীতে মেধাতালিকায় নাম থাকলেও এই প্রথম উঠে এল শীর্ষে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছে রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের কৃতী ছাত্র আদৃত সরকার। আদৃতের এই সাফল্য গোটা জেলাকেই গর্বিত করেছে। প্রায় দশক পর রাজ্যের মেধা তালিকায় স্থান পেল ঐতিহ্যবাহী করোনেশন হাইস্কুল। এর আগে ২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছিল অনির্বাণ সাহা। দীর্ঘ সময় বাদে কুলিকপাড়ের এই শহরের নাম জ্বলজ্বল করে উঠল চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আদৃতের হাত ধরে। যার জন্য আদৃত সহ কৃতী পড়ুয়াদের নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রায়গঞ্জ পুরসভা। আদৃত একা নয় জেলাকে গর্বিত করেছে কৌস্তভ সরকার ও সত্যম সাহাও।রায়গঞ্জ পুরসভার প্রশাসক সন্দীপ বিশ্বাস বলেন, মেধাতালিকায় নাম থাকলেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় এর আগে কখনও রায়গঞ্জ থেকে কেউ শীর্ষ তালিকায় স্থান পায়নি। তাই মাধ্যমিকে রাজ্যের সেরা আদৃত সরকার সহ আরও কিছু সফল পড়ুয়া এবং নাচ, গান, শিল্প সংস্কৃতি ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা জেলার সকল কৃতীকে এক মঞ্চে রেখে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সামনেই আমাদের পুরসভার ৭৫ বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষ্যেই সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা রয়েছে বলে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় করোনেশন হাইস্কুলের ফল এবার ভালো হওয়ায় বেজায় খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কালীচরণ সাহা বলেন, স্কুলের পরামর্শ মতো লক্ষ্যে পৌঁছতে পড়ুয়ারা কঠোর পরিশ্রম করেছে। আদৃত ও কৌস্তভ দুজনেই ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনায় ভালো। আমরাও জানতাম ওরা খুব ভালো ফল করবে। তবে এতটা ভালো হবে, মেধা তালিকায় ওদের উজ্জ্বল স্থান অধিকার করার কথা জেনে গর্ব অনুভব করছি। দুজনেই জানিয়েছে, বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে তাদের। স্কুলের পক্ষ থেকে আমরা শিক্ষকরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করব। এদিকে শুধু আদৃতই নয় মেধাতালিকায় করোনেশন স্কুলের আরেক কৃতী কৌস্তভ সরকার দশম স্থান অধিকার করেছে। তার প্রাপ্তনম্বর ৬৮৬। রায়গঞ্জ শহরের কলেজ পাড়ার বাসিন্দা কৌস্তভ। তার বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক মহাদেব সরকার ও আইসিডিএস কর্মী মা বীথিকা সরকার বলেন, স্কুল বা টিউশন পড়তে যাওয়া ছাড়া কৌস্তভ ছোট থেকেই বই নিয়েই সারাদিন কাটায়। ছেলের ইচ্ছে চিকিৎসক হওয়ার। পড়াশোনা ছাড়াও মোবাইলে গেম খেলতে ভালোবাসে সে। ডাক্তার হওয়ার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

    কৌস্তভ ইতিহাস ও ভূগোলে একশোয় একশো পেয়েছে। অঙ্কে ৯৯, বাংলায় ৯৮। ভৌতবিজ্ঞান ও জীবনবিজ্ঞানে পেয়েছে যথাক্রমে ৯৫ ও ৯৬ নম্বর। ৯৮ পেয়েছে ভূগোলে। অন্যদিকে রায়গঞ্জ শহরেরই বন্দর এলাকার বাসিন্দা সারদা বিদ্যামন্দির স্কুলের ছাত্র সত্যম সাহা মেধাতালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করে নিয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৮। সত্যম অঙ্কে একশোয় একশো পেয়েছে। এছাড়া ভূগোল ৯৯, জীবনবিজ্ঞান ৯৯, ইতিহাস ৯৭, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৭, বাংলা ৯৮ ও ইংরাজিতে ৯৮ পেয়েছে। সত্যম সাহার স্বপ্ন বড় হয়ে অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করা। সত্যমের বাবা সোনা সাহা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ও গৃহবধূ মা মৌমিতা সাহা বলেন, ছেলেকে পড়াশোনার জন্য কখনও বলতে হয়নি। 

     মাধ্যমিকে প্রথম আদৃত সরকারকে মায়ের আদর।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)