সমস্ত বিষয়ে লেটার পেয়ে চমক ক্যান্সার আক্রান্ত অনন্যর
বর্তমান | ০৩ মে ২০২৫
বলরাম দত্তবণিক, রামপুরহাট: যে কোনও বাধা টপকানোর জন্য চাই মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তি। তা আরও একবার প্রমাণ করে দেখাল রামপুরহাটের অনন্য দাস ওরফে সানি। সে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। দীর্ঘ কয়েকমাস কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তাই সে স্কুলে পর্যন্ত যেতে পারেনি। শরীর খারাপের জন্য মাঝে মধ্যেই পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে। পরীক্ষার দু’দিন আগেও কলকাতা থেকে নিয়ে আসতে হয়েছে কেমো। এতকিছুর পরেও সে দমে যায়নি। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে প্রায় ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে সে চমক দিয়েছে। পাড়া প্রতিবেশীরা তাই বলছেন, সত্যিই ও অনন্য।
রামপুরহাট জে এল বিদ্যাভবনের ছাত্র সানি। বাড়ি রামপুরহাটের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রণবপল্লিতে। ছোট থেকেই সে পড়াশোনায় ভালো। ২০২৩ সালের শেষে তার শরীরে মারণ রোগ ধরা পড়ে। ওই বছরের আগস্ট মাস থেকে পরের বছরের জুন মাস পর্যন্ত টানা ১০ মাস কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই জুলাই মাস থেকে সে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এরই মধ্যে তিনমাস অন্তর কেমোথেরাপি নিতে সাতদিনের জন্য কলকাতায় যাওয়া। চিকিৎসক যেহেতু বাইরে বেরতে নিষেধ করেছিল, তাই স্কুলও যাওয়া হয়নি। গৃহশিক্ষক নিয়ে বাড়িতেই পড়াশোনা। একদিকে জীবনযুদ্ধের কঠিন লড়াই, অন্যদিকে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। তবে অসুস্থততা তার মনের জোরকে কমাতে পারেনি। বরং এটাকেই সে অস্ত্র বানিয়ে ফেলে। তাতেই এসেছে সাফল্য। ৭০০ মধ্যে ৬২২ পেয়ে সে চমক দিয়েছে।
সানি বাংলায় ৮৫, ইংরেজিতে ৮৬, গণিতে ৯৭, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৩, জীবনবিজ্ঞানে ৯০, ইতিহাসে ৮০ ও ভূগোলে ৯১ নম্বর পেয়েছে। সে বলে, শরীর ভালো থাকলে আরও ভালো ফল করতে পারতাম। তবুও যা পরীক্ষা দিয়েছি তাতে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পাব আশা করেছিলাম। কিন্তু, পেয়েছি ৮৯ শতাংশ। কয়েকটি বিষয়ে রিভিউয়ের আবেদন জানাব।
জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে ফেলেছে মেধাবী এই কৃতী। অনন্য বলে, আমি নিজে যেহেতু ক্যান্সার আক্রান্ত। তাই অঙ্কলজিস্ট নিয়ে পড়ে ক্যান্সারের চিকিৎসক হতে চাই। সেইমতো প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি।
সানির বাবা নন্দদুলাল দাস পেশায় ছোট্ট ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ও আমাদের একমাত্র সন্তান। ছেলের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। ছেলের সাহস দেখেই আমরা সাহস পাই। ও বলে আমি পড়াশোনা করে চিকিৎসক হব। অসুস্থতার মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা শুরুর দু’দিন আগেও কলকাতায় কেমো নিয়ে আসতে হয়েছে। মনের জোরে মারণ ব্যাধিকে সঙ্গী করে ছেলে পরীক্ষা দিয়েছে। মা জুঁই দত্ত দাস বলেন, ছেলে সুস্থ থাকলে রাজ্যের মেধা তালিকায় স্থান করে নিত। তবুও ছেলের সাফল্যে আমরা খুশি। যত কষ্টই হোক ছেলের লক্ষ্যপূরণ করবই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌস্তভ দাস বলেন, ও স্কুলে আসতে না পারলেও শিক্ষকরা মানসিক ও পঠনপাঠনের দিক থেকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। তবে সবটাই সম্ভব হয়েছে ওর মনের জোরে। ও এভাবেই সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাবে এই বিশ্বাস ও ভরসা রয়েছে।