• মামার বাড়িতে বড় হয়েই মেধা তালিকায় সম্ভাব্য চতুর্থ সেলিম
    বর্তমান | ০৩ মে ২০২৫
  • অনিমেষ মণ্ডল, কাটোয়া: চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই মায়ের মৃত্যু। মামাবাড়িতে বড় হয়ে ওঠা। রাজ্যে সম্ভাব্য চতুর্থ স্থান অধিকার করে তাক লাগাল কেতুগ্রামের মহম্মদ সেলিম। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২। কেতুগ্রামের নিরোল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক দিয়েছিল সে। এবার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। 

    সেলিমের মামাবাড়ি কেতুগ্রামের সেরান্দি গ্রামে। মা’কে হারিয়ে মামি, দাদু ও দিদার কাছেই পড়াশুনা। মামার বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কিন্তু সেলিমের পড়াশোনার ব্যাপারে কোনও কার্পন্য করেননি কেউই। মামা মহম্মদ  ফজলে কেরিম ভাগ্নেকে মানুষ করতে ভীষণ কষ্ট করেছেন। এমনকী নিজে বিয়েও করেননি। বাবা গোলাম গাউস আগরডাঙ্গা মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। সেলিমকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত মামাবাড়ির পাশাপাশি গ্রামের লোকজনও।  শুক্রবার দুপুরে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসেন কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজ। তিনি বলেন, ‘সেলিম আমাদের কেতুগ্রামের  গর্ব। গ্রামে থেকেও মেধাতালিকায় যে  স্থান পাওয়া যায়, সেটা সেলিম করে দেখিয়ে দিয়েছে।’ সেলিম বাংলায় পেয়েছেন ১০০,  ইংরাজিতে ৯৫,   অঙ্কে ১০০,  ভৌতবিজ্ঞানে ১০০,   জীবনবিজ্ঞানে ৯৯,  ইতিহাসে ৯৮ আর ভূগোলে ১০০। দিনে ১০ থেকে ১১  ঘণ্টা পড়াশুনা করত সেলিম। গৃহশিক্ষকের থেকেও সে বেশি প্রাধান্য দিত স্কুলের পঠনপাঠনের উপর। প্রতিদিন স্কুলে তার যাওয়া চাই৷ শিক্ষকদের পড়ানো মন দিয়ে শুনত৷ সেলিম এদিন বলেন, ‘ভালো ফল করব আশা করেছিলাম। কিন্তু মেধাতালিকায় স্থান পাব, সেটা ভাবিনি৷ খুব ভালো লাগছে। মা বেঁচে থাকলে খুশি হতেন৷ আজকে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। আমি আইআইটিতে পড়াশুনা করে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই৷’ 

    এদিন সেলিমের মামা মহন্মদ ফজলে কেরিম বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা ভালো ফল করেছে, এটা দেখে আমার গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে৷ ভাগ্নের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন আমি সফল করবই৷’  কেতুগ্রামের নিরোল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯৭৬ জন পড়ুয়া রয়েছে৷ সে জায়গায় শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৩ জন৷ তারমধ্যে আবার একজনের চাকরি চলে গিয়েছে৷ অপ্রতুল শিক্ষক নিয়েও ক্লাসে পড়ুয়াদের রীতিমতো পড়াশুনা করানো হতো৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু হাজরা বলেন‘, সেলিম আমাদের স্কুলের নাম রাজ্যের মেধাতালিকায় পৌঁছে দিয়েছে৷ খুব মেধাবী ছাত্র৷ আমাদেরও খুব আনন্দের দিন৷’ এদিন সেলিমের মামারবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দাদুর চোখে আনন্দাশ্রু৷ তিনি ধরা গলায় বলেন, ‘নাতির এই সাফল্য দেখার জন্যই আমরা সব সময় সব কষ্ট চেপে রেখেছিলাম। আমার মেয়ে অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছে৷ এখন নাতিই আমাদের মুখ উজ্জ্বল করল।’ 

     দাদু-দিদার সঙ্গে কেতুগ্রামের সেলিম।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)