জেলায় প্রথম হয়েও কপালে ভাঁজ পরিযায়ী শ্রমিকের মেয়ে মাম্পির
বর্তমান | ০৩ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, মানবাজার: মাত্র এক নম্বরের জন্য স্থান মেলেনি মাধ্যমিকের মেধা তালিকায়। কিন্তু তাতে কী! যে চরম আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করে সে জেলায় প্রথম হয়েছে, সেই লড়াই তাকে এগিয়ে রেখেছে অনেকের থেকে।
পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের ন’ পাড়ার মেয়ে মাম্পি দাসের ফল চমকে দিয়েছে সবাইকে। বাবা উত্তমকুমার দাস পরিযায়ী শ্রমিক। চারজনের সংসার সেই আয়ে চালানো কঠিন। তাই মাম্পির মা শান্ত দাস সংসারের কাজ সামলে মালা তৈরি করেন। এরকম এক পরিবারের সন্তান জেলায় প্রথম হওয়ায় গর্বিত গোটা গ্রাম। উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারছেন না মাম্পির অভিভাবকরাও। তবে ভালোলাগা, গর্বের পাশাপাশি মাম্পির অভিভাবকদের মনে যে চিন্তাটি চেপে বসেছে, তা হল আগামী দিনে মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগানো। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে মাম্পির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
মাম্পির আর্থারাইটিসের সমস্যা আছে। শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির জোরে সেই সমস্যাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ন’পাড়া হাই স্কুলের ছাত্রীটি। পড়াশোনায় তার ছাপ পড়তে দেয়নি। শুক্রবার সকালে ফল ঘোষণা হতেই অনলাইনে রেজাল্ট দেখে আপ্লুত হয়ে পড়ে পরিবারের সবাই। মাধ্যমিকে তার মোট নম্বর ৬৮৫। জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এক নম্বরের জন্য মেধা তালিকা থেকে বাদ পড়লেও, তা নিয়ে আক্ষেপ নেই মাম্পির। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় সে। ন’ পাড়া হাই স্কুলের টিচার ইন চার্জ শুকদেব মাহাত বলেন, মাম্পি বরাবরই পড়াশোনায় ভালো। ওর কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। তা সত্ত্বেও নিয়মিত স্কুলে আসত। বরাবরই স্কুলে প্রথম হতো। ওর এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। ও যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে তার জন্য সর্বদা আমরা ওর পাশে আছি।
এদিন মাম্পি জানায়, আর্থারাইটিসের সমস্যার জন্য সবসময়ে পড়াশোনা করতে পারতাম না। তবে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়তাম। জেলায় প্রথম হয়ে খুবই ভালো লাগছে। আগামী দিনের ডাক্তারি পড়তে চাই। তার এই সাফল্যের পিছনে পরিবারের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক সহ গ্রামের কয়েকজন দাদারও অবদান আছে বলে জানায় সে। মাম্পি জানায়, আগামী দিনে ডাক্তার হয়ে মা-বাবার অর্থকষ্ট দূর করতে চাই। সেই সঙ্গে গরিব মানুষের সেবা করতে চাই। কিন্তু ডাক্তারি পড়তে গেলে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। তার জন্য খরচ অনেক। কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি যদি সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তবে উপকার হবে।
মাম্পির মা মেয়ের এমন রেজাল্টে গর্বিত। তিনি আগামী দিনের মেয়ের সাফল্য কামনা করেছেন। এদিন মাম্পির বাবা বাড়িতে ছিলেন না। কাজের সূত্রে তামিলনাড়ুতে রয়েছেন তিনি। মেয়ের কাছ থেকে ফোনে রেজাল্ট শুনেই খুশি তিনি। মাম্পির দাদা মুন্না দাস বলেন, মাম্পি পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ির কাজও করে। ওর সাফল্যে আমরা খুবই খুশি। অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান ও ইতিহাসে একশোয় ১০০ পেয়েছে সে। বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৫, জীবন বিজ্ঞান ও ভূগোলে ৯৭ পেয়েছে। এদিন মাম্পির এই রেজাল্টের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাড়িতে এসে অনেকে তাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে যান।