• মাধ্যমিকের শিরোপা জেলারই, পাশের হার রেকর্ড ৮৬.৫৬ শতাংশ, মেধা তালিকায় কলকাতা থেকে মাত্র ১
    বর্তমান | ০৩ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রতি বছরের মতো এবারও মাধ্যমিকে দারুণ ফল করল জেলার ছাত্রছাত্রীরা। মেধা তালিকায় প্রথম দশে থাকা ৬৬ জনের মধ্যে ৬৫ জনই বিভিন্ন জেলার পড়ুয়া। কলকাতা থেকে এই তালিকায় রয়েছে মাত্র একজন। সেই জায়গায় শুধুমাত্র বাঁকুড়া জেলা থেকেই মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে ১০ জন কৃতী। কোভিড-কাল বাদ দিলে এবছর পাশের হারেও (৮৬.৫৬ শতাংশ, গতবারের তুলনায় ০.২৫ শতাংশ বেশি) রেকর্ড হয়েছে। সেই নিরিখে অবশ্য কলকাতার কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর (৯৬.৪৬ শতাংশ) এবং কালিম্পংয়ের (৯৬.০৯ শতাংশ) পরেই রয়েছে রাজ্যের রাজধানী শহর। 

    রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলের ছাত্র আদৃত সরকার ৭০০ নম্বরের মধ্যে ৬৯৬ পেয়ে প্রথম হয়েছে। মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র অনুভব বিশ্বাস এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের ছাত্র সৌম্য পাল রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৪। এক নম্বর কম পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাঁকুড়ার কোতুলপুর সরোজবাসিনী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ঈশানী চক্রবর্তী। এ বছর মাধ্যমিকে বসেছিল ৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪২৫ জন পড়ুয়া। এর মধ্যে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৮১ জন ছাত্র এবং ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫৪৪ জন ছাত্রী। মোট প্রার্থীর মধ্যে ‘রেগুলার’ অর্থাৎ এবারই প্রথম পরীক্ষায় বসেছে ৯ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন। বাকিরা আগের বছরের অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী।

    পাশের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘রেগুলার’ প্রার্থীদের হিসেবই ধরা হয়। উত্তীর্ণ ‘রেগুলার’ প্রার্থী ৭ লক্ষ ৯১ হাজার ৮৮ জন। তার মধ্যে ছাত্র ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩২২ এবং ছাত্রী ৪ লক্ষ ২২ হাজার ৭৬৬ জন। পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও পাশের হারে ছেলেরা টেক্কা দিয়েছে তাদের। ছেলেদের পাশের হার যেখানে ৮৯.১৯ শতাংশ, সেখানে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এই হার ৮৪.৩৯ শতাংশ। সর্বভারতীয় বোর্ডে যেখানে পাশের হার এবং সেরাদের তালিকায় ছাত্রীদের আধিক্য, সেই জায়গায় মাধ্যমিকে এই ছবি কিছুটা বিসদৃশ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এর পাশাপাশি ১ লক্ষ ২০ হাজার ৮৮১ জন অকৃতকার্য ‘রেগুলার’ পরীক্ষার্থী নিয়েও উদ্বেগ বাড়তে বাধ্য। কন্টিনিউয়িং (সিসি) এবং কম্পার্টমেন্টাল প্রার্থী ধরলে আরও ৩১ হাজার ৬৭২ জন অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী যুক্ত হবে। বুধবার প্রকাশিত আইসিএসই পরীক্ষার ফলে পাশের হার ছিল ৯৮.৭৬ শতাংশ। তাহলে মাধ্যমিকে এত অনুত্তীর্ণ কেন? মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিকে যত স্কুল রয়েছে, যত রকম আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে ছাত্রছাত্রীরা উঠে আসে, তা রীতিমতো গর্বের বিষয়। তাই অন্য কোনও বোর্ডের সঙ্গে এর তুলনা চলে না। ওই সব বোর্ডে পড়াশোনা করেন আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে থাকা পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা। তাছাড়া, মাধ্যমিকে যথাযথ মূল্যায়ন হয় বলেই পাশের হার এতটা বেশি হয় না।’

    এ বছর মাধ্যমিকের মূল পরীক্ষাপর্ব শেষ হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। তখন থেকে ধরলে ৬৯তম দিনে ফল প্রকাশ করল পর্ষদ। মোট ৫২ হাজার ২৭৩ জন  পরীক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন ১ হাজার ৪৮৫ জন প্রধান পরীক্ষক। এছাড়া, ৮ হাজার ৩০০ জন স্ক্রুটিনিয়ারকে নিযুক্ত করেছে পর্ষদ। ফলপ্রকাশের আগে পর্ষদের সদর দপ্তর নিবেদিতা ভবনে শিক্ষাকর্মীদের অনশন তথা করুণাময়ীতে চাকরিচ্যুত শিক্ষাকর্মীদের অবস্থান অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অফিসের বাইরে থেকেই কয়েকদিন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছিলেন পর্ষদের আধিকারিকরা। এই অবস্থায় ফলপ্রকাশের দিন কী হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার অবশ্য শিক্ষাকর্মীরা অবস্থান এবং অনশন তুলে নেন। তবে স্কুলগুলিতে শিক্ষাকর্মীর অভাব থাকায় মার্কশিট বণ্টন নিয়ে কিছু সমস্যা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)