নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মঙ্গলবার রাতে বড়বাজারের ঋতুরাজ হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জনের প্রাণ চলে গিয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। বাঁচিয়ে দিয়েছে বহুতল হোটেলের খোলা ছাদ! ওই অবস্থায় যাঁরা ছাদে উঠে আসতে পেরেছিলেন, উদ্ধারকারীদের তৎপরতায় তাঁদের শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গিয়েছে। ঠিক উল্টো পরিস্থিতি ছিল প্রায় ১৫ বছর আগে পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে। সেখানে ছাদের দরজা বন্ধ থাকায় সিঁড়িতেই পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল একাধিক মৃতদেহ। ক’দিন আগে পাথুরিয়াঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে দু’জনের মৃত্যু হয়। সেক্ষেত্রেও ছাদের দরজা বন্ধ ছিল বলে তাঁরা বেরতে পারেননি। তাই এবার বহুতলের ছাদ ব্যবহার নিয়ে কড়া হচ্ছে পুরসভা। শুক্রবার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশ, ‘যে কোনও বিল্ডিংয়ের ছাদ সেখানকার বাসিন্দা বা আবাসিক—সবার ব্যবহারের জন্য। ওই অংশ ‘ওপেন’ রাখা বাধ্যতামূলক। তাই শহরের সব রুফ টপ রেস্তরাঁ বন্ধ করতে হবে।’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মেয়র জানান, ছাদ হল ‘কমন এরিয়া’। কেউ বিক্রি করতে পারে না। তাই রুফ টপ রেস্তরাঁও সেখানে করা যাবে না। তবে কেউ ছাদ না ঘিরে অর্থাৎ চারপাশ খোলা রেখে রুফ টপ রেস্তরাঁ চালান, সেক্ষেত্রে কী হবে? মেয়র বলেন, ‘সেটা দেখে নেওয়া হবে।’ আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পুর আইনের ১১৭ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারায় বলা আছে, ছাদ ‘কমন অ্যাকসেস’। তাতে কেউ ভাগাভাগি বা পার্টিশন করতে পারবে না।
কিন্তু, কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত বহুতলে রুফ টপ রেস্তরাঁ কীভাবে বন্ধ করা সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠছে পুরসভার অন্দরেই। এক পুরকর্তা বলেন, ‘বিল্ডিং আইনে ছাদ নিয়ে বিশেষ নির্দেশ রয়েছে। কেউ ছাদ ঘিরে রেস্তরাঁ বা অন্য কোনও ব্যবসা চালালে তা বন্ধ করা হবে। ইতিমধ্যে অভিযান শুরুও হয়েছে। ছাদ ফাঁকা না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ কিন্তু ছাদ খোলা রেখেই রেস্তরাঁ চালালে কী হবে? ওই কর্তার দাবি, ছাদে ‘ওপেন স্পেস’ রয়েছে কি না, বিল্ডিংয়ের সবাই তা ব্যবহার করতে পারছে কি না, দুর্ঘটনা ঘটলে ছাদে উঠে বাঁচার সুযোগ আছে কি না—এসব দিক খতিয়ে দেখে ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে অনুমোদন মিলতে পারে। তাছাড়া, সমস্ত ধরনের রুফ টপ রেস্তরাঁ বন্ধ করে দিতে গেলে আইনি জটিলতার আশঙ্কা করছেন আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এর আগে হুক্কা বার বন্ধ করার নির্দেশিকা নিয়ে আদালতে ধাক্কা খেতে হয়েছিল পুরসভাকে। তাই এক্ষেত্রে সবদিক বিবেচনা করেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, হোটেল ও গেস্ট হাউস নিয়ে লালবাজারও নির্দেশিকা জারি করেছে। হোটেল বা গেস্ট হাউস নির্মাণে অনুমোদিত নকশার সঙ্গে কিছু পার্থক্য বা ‘ডিভিয়েশন’ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছাদ সবসময় খোলা থাকছে কি না, তাও দেখতে হবে। শুক্রবার থেকে শহরজুড়ে পুলিসি অভিযান শুরু হয়েছে। নির্দেশিকায় সাফ বলা হয়েছে, সব ধরনের লাইসেন্স, বিশেষ করে দমকলের লাইসেন্স থাকলে তবেই হোটেল বা গেস্ট হাউস চালানোর ‘এনওসি’ দেবে পুলিস। কলকাতার কোন থানা এলাকায় ক’টি রুফ টপ রেস্তরাঁ আছে, শুক্রবার সকালে ওসিরা সেই রিপোর্ট দমা দিয়েছেন।