কলেজে পড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে এগতে চায় সোনিয়া ও প্রিয়াঙ্কা
বর্তমান | ০৩ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতায় রাসবিহারী মোড় থেকে সাদার্ন অ্যাভিনিউ পর্যন্ত লম্বা ফুটপাত। সে ফুটপাতে ছোট থেকে কিশোরী বয়সে পৌঁছেছে দু’টি মেয়ে। তারা এবছর মাধ্যমিক দিয়েছিল। পাশ করেছে। খোলা আকাশের নীচে বড় হওয়া দুই মেয়ের মুখে সাফল্যের হাসি। সে হাসিমুখ আলোর ফুল হয়ে ঝড়ছে। ফলে যেন অকাল বসন্ত সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতজুড়ে।
দু’জনের নাম, সোনিয়া ঘোষ ও প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক। সোনিয়া পড়ে টালিগঞ্জ গার্লস হাইস্কুলে। টালিগঞ্জ ব্রিজের নীচে ঝুপড়িতে থাকে। বাড়িতে রয়েছে মা ও ভাই। মা স্থানীয় একটি নার্সিং হোমে সাফাই কর্মীর কাজ করেন। ভাই পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। নেশা করে দিন কাটে বাবার। আর প্রিয়াঙ্কার বসবাস সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের সুলভ শৌচালয়ের বারান্দায়। বাবা রাজমিস্ত্রি। মা গৃহবধূ। ভাই সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে। দিদি দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠল। সোনিয়া হতে চায় ট্যাটু আর্টিস্ট। প্রিয়াঙ্কা বড় হয়ে ছবি আঁকাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চায়। এদিন অনেকে তাদের পাশ করার খবর পেয়েছেন। তাঁরা বিস্মিত! সকলকে বিস্মিত করার নেপথ্যে রয়েছেন একজন মহিলা। তাঁর নাম, মিত্রবিন্দা ঘোষ। তিনিই সোনিয়া, প্রিয়াঙ্কাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। দিনভর মিত্রবিন্দাদেবীর এনজিও স্কুলে থেকে পড়াশোনা করে এই দুই কিশোরী। রাতে বাড়ি যায়। সোনিয়া বলে, ‘আমার আঁকতে ভালো লাগে। বড় হয়ে ট্যাটু আর্টিস্ট হব। প্রথম ট্যাটু নিজের হাতেই আঁকব।’ মাকে পাশের খবর দিয়েছে। বলল, ‘মা খুব, খুব খুশি হয়েছে।’ প্রিয়াঙ্কা হল সোনিয়ার বন্ধু। সে পড়ে কালীধন ইনস্টিটিউশনে। মিত্রবিন্দা বলেন, ‘প্রথমে ওদের পড়াশোনার পথে টেনে আনা খুব কঠিন ছিল। ওদের বাবা-মাও রাজি ছিলেন না। তবে ধীরে পরিস্থিতি সহজ হয়। স্কুলে ভর্তি করাও গিয়েছে।’ সোনিয়া-প্রিয়াঙ্কারা এখন ভরসা রাখে লেখাপড়ার উপরই। ফুটপাতের অন্ধকার সরিয়ে আলোয় ফিরেছে। সেভাবেই বাঁচতে চায়। প্রিয়াঙ্কা এদিন জোরগলায় বলল, ‘কিছুতেই পড়াশোনা ছাড়ব না। কলেজে যাব।’ এ সাফল্য দেখে উৎসাহী ওদের ভাই-বোনেরা, বন্ধু-বান্ধবরা। তারা পড়াশোনাই করবে, জনে জনে এদিন জানাল সে কথা। নিজস্ব চিত্র