• ঘটনার সময় হোটেলেই ছিলেন অভিযুক্ত দুই মালিক, সিটের হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য
    বর্তমান | ০৩ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঋতুরাজ হোটেলে যখন আগুন লাগে, সেই সময় সেখানেই ছিলেন অভিযুক্ত মালিক আকাশ চাওলা ও অতুল চাওলা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বুঝেই হোটেল ছাড়েন তাঁরা। ধৃতদের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখার পর এমনই তথ্য পেয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট। তারা আরও জেনেছে, ওই দু’জন হোটেলের অন্যান্য কর্মীকেও পালিয়ে যেতে বলে যান। দুই অভিযুক্ত হোটেল থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যান তাঁদের অন্য একটি হোটেলে। সেখানে বসে পরিচিতদের মাধ্যমে পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছিলেন। কয়েক ঘণ্টা সেখানে থাকার পর সল্টলেকে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তাঁরা। সেখান থাকাও নিরাপদ নয় বুঝে আলাদা আলাদা ভাবে পালানোর সময় পুলিসের হাতে ধরা পড়ে যান আকাশ ও তাঁর ম্যানেজার। আকাশের ভাই অতুল পলাতক। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এদিকে, হোটেলের অন্দরসজ্জার বরাত পাওয়া খুরশিদ আলম বৃহস্পতিবার রাতে বিদেশ থেকে ফিরতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিট।

    তদন্তে নেমে অফিসাররা জানতে পারছেন, হোটেল ব্যবসা শুরুর আগে বিমানসেবিকার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বালিগঞ্জ এলাকায় একটি ইনস্টিটিউট চালাতেন আকাশ চাওলা। অভিযোগ, বিমানসেবিকার চাকরি পাইয়ে দেবেন বলে বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন তিনি।  সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসা তরুণ-তরুণীদের বলা হয়েছিল, তাদের ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বিভিন্ন বিমান সংস্থার চুক্তি রয়েছে। সেই মতো এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষিতরা নিয়োগ পাবেন। চাকরির আশায় অনেকেই টাকা দিলেও কেউ পাননি। এনিয়ে বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ হলে পুলিস আকাশকে গ্রেপ্তার করে। প্রতারণার টাকায়  বিভিন্ন জায়গায় হোটেল খুলে বড় ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন তিনি। 

    তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, হোটেলের ইন্টিরিয়র বা অন্দরসজ্জার জন্য আকাশ দায়িত্ব দিয়েছিলেন কড়েয়ার বাসিন্দা খুরশিদকে। তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। কাজের জন্য বিভিন্ন দাহ্যবস্তু আনা হয়েছিল, যা  মজুত রাখা হয় দোতলায়। এই কাজের জন্য আসা শ্রমিকরা হোটেলের ঘরেই থাকতেন ও রান্না করে খাওয়াদাওয়া সারতেন। তাঁরা রান্না করার সময়ই গ্যাস থেকে আগুন লাগে বলে দাবি তদন্তকারীদের। দাহ্য পদার্থ ঠাসা থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় হোটেলের দুই মালিক ও ম্যানেজার নিজেদের চেম্বারেই ছিলেন। আগুন লেগেছে শুনেই দ্রুত নীচে নেমে চম্পট দেন তাঁরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হোটেলের জানালার কাচ ভাঙতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন দমকল ও ডিএমজির কর্মীরা। পরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, জানালাগুলিতে যে ধরনের মোটা কাচ লাগানো হয়েছিল, তা নিয়মবিরুদ্ধ। অধিকাংশ ঘরে জানালা না থাকায় ধোঁয়া বেরতে পারেনি। যে কারণে একজন বাদে বাকি সবার দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। 

    আকাশ তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, আগুন নেভানোর জন্য যন্ত্রপাতি বসালেও সেগুলি যাতে সক্রিয় থাকে, তার জন্য পৃথক কোনও ‘সিস্টেম’ রাখা হয়নি। ফলে প্রয়োজনের সময় সেগুলির কোনওটাই কাজে আসেনি। নিয়ম ভেঙে বাড়তি বেশ কিছু রুম তৈরি করা হয়েছিল বলেও জানতে পারছেন তদন্তকারীরা।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)