বিদ্যালয়ে প্রথম, জেলায় ছাত্রীদের মধ্যে সেরা, তবু মেধাবী থৈবির জন্য কাঁদছে স্কুল ও পরিবার...
আজকাল | ০৩ মে ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৪। শতাংশের হিসেবে ৯৬.২৯%। তবু শোকের ছায়া আসানসোল শিল্পাঞ্চলে। কারণ, একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটেছে। শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের দিন কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্কুলের শিক্ষিকা ও বন্ধুরা। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন পরিবার আত্মীয়স্বজন-সহ পাড়া-প্রতিবেশী।
আসানসোল উমারানি গড়াই স্কুলে প্রথম থেকেই ভাল ছাত্রী হিসেবে পরিচিত ছিল থৈবি মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে মাধ্যমিকেও স্কুলে সেরা হিসেবে রইল সে। কিন্তু এই ফলাফল থৈবি দেখে যেতে পারল না। সে আজ আর জীবিত নেই। লিভারের রোগে গত ১৬ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়েছে।
পরীক্ষার আগে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিল থৈবি। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি টান থাকায় পেটে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়েই সে পরীক্ষা দিয়েছিল। শুধুমাত্র সুস্থ ছিল বাংলা পরীক্ষার দিন। আর বাংলাতেই তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৯। তারপর থেকেই নম্বর কিছুটা কমতে থাকে। যার পিছনে শারীরিক অসুস্থতাই কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। যদিও অন্যান্য বিষয়েও তার নম্বর যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।
থৈবি এতটাই মেধাবী ছিল, সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিতে পারলে হয়তো রাজ্যে সে সেরা হতে পারত, দাবি স্কুলের শিক্ষিকাদের। স্কুল এবং পরিবার সূত্রে জানা যায়, পড়াশুনার বাইরে আঁকা, গান এবং অন্যান্য বিষয়েও সে ছিল সমান পারদর্শী।
থৈবির বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় পেশায় একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। মা পিউ মুখোপাধ্যায় গৃহবধূ। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে মেয়ের লিভারের রোগ ধরা পড়ার পর চিকিৎসার জন্য হায়দ্রাবাদ, ভেলোর সর্বত্র ছুটে যান তাঁরা।
লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য প্রয়োজন বিপুল অঙ্কের টাকা। এগিয়ে আসে স্কুল এবং শহরবাসী। তার চিকিৎসার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় করা আবেদনে সাড়া দেয় বহু মানুষ। জানা গিয়েছে, সবাই মিলে চেষ্টা করে ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ জোগাড় করা হয়েছিল। তবু বাঁচানো যায়নি থৈবিকে।
স্কুল থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশী প্রত্যেকেই আশা করেছিলেন এবছর পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় এক থেকে দশের মধ্যে জায়গা করে নেবে থৈবি। কিন্তু অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়ায় এক থেকে দশের মধ্যে জায়গা না করতে পারলেও স্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর সে পেয়েছে। জেলায় ছাত্রীদের মধ্যে সেরা।
মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের দিন মানসিক ধাক্কা ও অস্বস্তি কাটাতে কয়েকদিনের জন্য থৈবির মা ও বাবা চলে যান আসানসোল ছেড়ে। বাড়িতে থৈবির বৃদ্ধ দাদু ও ঠাকুমা। ছবি বুকে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তাঁরা। একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হয়েছে। তাই রেজাল্ট আনতে যাননি। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল থৈবির ছবি আঁকড়ে ধরে রয়েছেন তাঁর ঠাম্মা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবার, আত্মীয়-পরিজনরা।