রনি চৌধুরী, ধূপগুড়ি
শারীরিক বাধা জয় করে মাধ্যমিকে সফল হলো জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দুই বোন পারমিতা ও সুস্মিতা। আট জনের সংসার। বাবা সাধন বসাক শ্রমিকের কাজ করেন। মা একটি স্কুলে মিড–ডে মিল রান্না করেন। জন্ম থেকেই বিশেষ ভাবে সক্ষম যমজ দুই বোনের রেজাল্টে খুশি স্কুলের শিক্ষিকারা। ধূপগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী দু’জনেই। এ দিন পাস হওয়ার খবর শুনে দুই বোনের প্রতিক্রিয়া, ‘আবার স্কুলে যাব আমরা।’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পারমিতাকে পড়াশোনা করতে দেখে সুস্মিতার পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ছোটবেলা থেকে বই নিয়ে পড়তে বসত দুই বোন। মা–বাবা কখনও ভেবে উঠতে পারেননি, মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারবে তাঁদের দুই মেয়ে। কারণ, অর্থের অভাবে গৃহশিক্ষক দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ দিন তাদের রেজাল্ট দেখে খুশি গোটা পরিবার। দু’জনেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমতি নিয়ে রাইটার নিয়ে পরীক্ষায় বসেছিল। পারমিতার প্রাপ্ত নম্বর ৩৬৯। বাংলায় ৬৭, ইংরেজিতে ৮২, অঙ্কে ২৫, ভৌত বিজ্ঞানে ৩৫, জীবন বিজ্ঞানে ৪৯, ইতিহাসে ৫০, ভূগোলে ৬১। সুস্মিতার প্রাপ্ত নম্বার ৪২৯।
বাংলায় ৭২, ইংরেজিতে ৮৩, অঙ্কে ৬৪, ভৌত বিজ্ঞানে ৬৪, জীবন বিজ্ঞানে ৪৫, ইতিহাসে ৫০ এবং ভূগোলে ৫১। দু’বোনের পড়াশোনার আগ্রহ দেখে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলেমেয়ের শারীরিক সমস্যা হলে তাদের পড়াশোনা করাতে চায় না অভিভাবকরা। সেই ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছে দুই বোন। জানা গিয়েছে, পরিবারে বাবা-মা, এক দিদি ও এক দাদা স্বাভাবিক থাকলেও আর এক দাদা ও তারা যমজ দুই বোন বিশেষ ভাবে সক্ষম। প্রতিবেশী উদ্ধব রায় বলেন,‘জন্মের পর থেকেই দুই বোন অসুস্থ। ঠিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না। পরিবারটি খুবই গরিব। বাবা শ্রমিক, মা স্কুলে রাঁধুনির কাজ করেন। সেই পরিবারের যমজ বোন এ ভাবেপরীক্ষায় পাস করবে কেউ ভাবতে পারেনি।’
পারমিতার রাইটার ছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী অন্তরা দাস। তার হাত ধরে মাধ্যমিকে সাফল্য মনে করে পারমিতা। দিদি সঞ্চিতা বসাক বলেন, ‘আমরা তিন ভাই, দুই বোন, বাবা–মা ও ঠাকুমা রয়েছে পরিবারে। বাবা শ্রমিকের কাজ করে কষ্টে সংসার চালান। দুই বোন ছোটবেলা থেকে অসুস্থ। অনেক চিকিৎসক দেখানো হলেও সুস্থ হয়নি। চিকিৎসকরা আশ্বস্ত করে শুধু বলেছেন,‘বড় হওয়ার সঙ্গে না কি সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু এখনও সুস্থ হয়নি ওরা। ছোটবেলায় আমাকে পড়তে দেখে বইখাতা টেনে নিত। খুব ভালো লাগছে। তবে দুশ্চিন্তা, উচ্চ মাধ্যমিক কী করে পড়বে?’ বাবা সাধন বসাক বলেন, ‘দুই মেয়ে মাধ্যমিকে যে ভাবে পাশ করেছে প্রথমে ভাবতেই পারিনি। নিজেকে আজ গর্বিত মনে হচ্ছে।’