এই সময়, শিলিগুড়ি: ভূস্বর্গ কাশ্মীরের গেটওয়ে শ্রীনগরের সঙ্গে শিলিগুড়ির কোনও মিলই থাকার কথা নয়। তবুও পর্যটকদের ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য এই দু'টি শহরের কতই না মিল। বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে শ্রীনগরেই ভিড় জমে। শিলিগুড়িও উত্তরবঙ্গের পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র। পর্যটকদের সিকিম, দার্জিলিং কিংবা ডুয়ার্সে যাতায়াত করতে হয় শিলিগুড়ি হয়েই। ট্রেন কিংবা বিমান থেকে নেমে পর্যটকেরা অধিকাংশই ওঠেন শহরের কোনও না কোনও হোটেলে। তার পরে পাহাড় কিংবা ডুয়ার্স যাত্রা। যাঁরা শহর পরিচালনা করেন, তাঁরা জানেন, পর্যটক মানেই গুচ্ছের আবর্জনা। ঠান্ডা পানীয়ের বোতল থেকে চিপসের প্যাকেটের আবর্জনা, সবই পর্যটকদের জন্যই সৃষ্টি হয়। দু'টি শহরের অমিলও এখানেই।
শ্রীনগরের রাস্তাঘাটে আবর্জনা দেখতেই পাওয়া যায় না। আর শিলিগুড়িতে আবর্জনা সরাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় পুরকর্মীদের। সম্প্রতি শিলিগুড়ি পুরসভার আবর্জনা সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ কাশ্মীর ঘুরতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন। শ্রীনগর পুরনিগমের আবর্জনা সাফাই ব্যবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। কিন্তু নাগরিকদের দায়িত্ববোধ অসাধারণ। রাস্তায় একটা নোংরা পড়ে থাকতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দেন তাঁরা। শিলিগুড়িতে রাস্তায় নোংরা পড়ে থাকলে 'টক টু মেয়রে' ফোন করে গুচ্ছের অভিযোগ জানান নাগরিকেরা। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পারিষদ মানিক দে বলেন, 'আসলে কোনও শহর কতটা পরিচ্ছন্ন থাকবে সেটা নির্ভর করে নাগরিকদের সচেতনতার উপরে। আমাদের কাশ্মীরিদের কাছ থেকে এটা শিখতে হবে।'
শিলিগুড়িতে অবশ্য আবর্জনা সাফাইয়ের প্রচলিত ধ্যানধারণাই বদলে দিতে চায় শিলিগুড়ি পুরসভা। আগে সকালে সাফাই কর্মীরা একবার রাস্তা সাফ করে চলে যেতেন। বেলা দশটা নাগাদ পুরসভার গাড়ি সেই আবর্জনার স্তূপ ট্রাকে তুলে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে দিতেন। এখন তিন বেলা সাফাই শুরু হয়েছে। স্থায়ী সাফাই কর্মীর বদলে নিয়োগ করা হচ্ছে নির্মল বন্ধু, নির্মল সাথীর মতো কর্মীদের। নির্মল বন্ধুদের কাজ আবর্জনা বোঝাই করার ভ্যান নিয়ে বাঁশি বাজিয়ে ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ানো। আর নির্মল সাথীদের কাজ বাড়ির মহিলাদের বোঝানো, কোন পাত্রে কোন আবর্জনা জমা করতে হবে। এত কিছুর পরেও গত মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভার মাসিক সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সাফাই কর্মীদের অবসর নিয়ে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলার মৌসুমী হাজরা, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলার মঞ্জুশ্রী পাল, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলার দীপ্ত কর্মকার, সকলেই সরব হন সাফাই কর্মীদের নিয়ে। মেয়র বলেন, 'পুরসভা এ জন্য একটা তহবিল তৈরি করবে।'