• হাইমাদ্রাসায় কন্যাশ্রীদের জয়জয়কার, শীর্ষে মালদহের ফাহমিদা-সাহিদা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৩ মে ২০২৫
  • প্রকাশিত হল হাইমাদ্রাসা পরীক্ষার ফলাফল। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সল্টলেকের মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ভবন থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। আলিম ও ফাজিল পরীক্ষার ফলও এদিন ঘোষণা করা হয়েছে। পরীক্ষা শেষের ৪০ দিনের মাথায় শনিবার হাইমাদ্রাসা, আলিম, ফাজিলের ফলপ্রকাশ হয়।

    এবার হাইমাদ্রাসায় পাশের হার ৯০.৩২ শতাংশ। আলিমে ৯২.৮১ শতাংশ এবং ফাজিলে ৯৩.১৫ শতাংশ পড়ুয়া পাশ করেছে। গত বছরের তুলনায় এবার পাশের হার বেড়েছে কিছুটা। গত বছর হাইমাদ্রাসায় ৮২.৯৭ শতাংশ পড়ুয়া, আলিমে ৯২.১৬ শতাংশ এবং ফাজিলে ৯২.৮৯ শতাংশ পড়ুয়া পাশ করেছিল। উত্তীর্ণদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    হাইমাদ্রাসার পরীক্ষায় জেলাভিত্তিক ফলের নিরিখে সবার প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর। এই জেলায় পাশের হার ৯৭.৫৪ শতাংশ। পাশের হারে দ্বিতীয় স্থানে উত্তর ২৪ পরগনা এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে রয়েছে মালদহ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা।

    হাইমাদ্রাসায় রাজ্যে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছে, মালদহের ভগবানপুর হাই মাদ্রাসার ফাহমিদা ইয়াসমিন এবং বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসার সাহিদা পারভিন। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৭৮০। দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে ইসলাম সাগর হাই মাদ্রাসার সামশুন নেহার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মহম্মদিয়া হাই মাদ্রাসার আলিফনুর খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭২।

    রতুয়া-১ ব্লকের সামসীর ভগবানপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী ফাহামিদা ইয়াসমিন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৮০ নম্বর। বাংলায় ১০০, ইংরেজিতে ৯৪, অঙ্কে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯৯, ভূগোলে ৯৯ এবং ইসলাম পরিচয় ৯৯ নম্বর পেয়েছে ফাহমিদা। ফাহামিদার কথায়, ‘রেজাল্ট ভালো হবে, তা নিয়ে আশাবাদী ছিলাম। তবে প্রথম হব এটা ভাবিনি। ঘড়ি ধরে পড়িনি। যখন ভালো লাগত, তখনই পড়তাম। পাশাপাশি ক্রিকেটও দেখতাম। আমি বিরাট কোহলির বড় ভক্ত। আমার এই সাফ্যলের পেছনে আমার পরিবার ও শিক্ষকদের অনেক অবদান। ভবিষ্যতে অধ্যাপক হওয়ায় ইচ্ছা রয়েছে।’

    মেধা তালিকায় প্রথম দশটি স্থানে রয়েছে ১৫ জন। রাজ্যে প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় থেকে শুরু করে অষ্টম স্থান পর্যন্ত একচেটিয়া রয়েছেন মালদহ জেলার পড়ুয়ারা। মেধা তালিকার প্রথম পাঁচটি স্থান ছাত্রীদেরই দখলে রয়েছে। ষষ্ঠ স্থান সহ মেধা তালিকায় মাত্র তিনজন ছাত্র রয়েছেন। বাকি সব আসনই মেয়েদের দখলে। আলিমে ১০ জন এবং ফাজিলে ১২ জন প্রথম দশে রয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমে মুর্শিদাবাদ থেকে হাইমাদ্রাসায় প্রথম হয়েছে জাভেদ আখতার। হুগলির ছাত্রী সাইমা শাহিন উর্দু মাধ্যমে প্রথম।

    পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘হাইমাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই! আমি আশা করি তোমরা ভবিষ্যতে আরও সাফল্য পাবে। তোমাদের জীবনের এই বিশেষ দিনটিতে, আমি তোমাদের বাবা-মা, তোমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক – সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁদের সহায়তাই তোমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি। আর যারা আজকে ভালো ফল করতে পারোনি, তাদের আমি বলব: মন খারাপ করো না। চেষ্টা চালিয়ে যাও। সামনের দিনে তোমরাও অবশ্যই সফল হবে।’

    চলতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে থেকে মাদ্রাসার পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা চলে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবার হাইমাদ্রাসায় মোট পরীক্ষার্থী ৪৪ হাজার ৭৩ জন। তার মধ্যে ছাত্র ১৫ হাজার ৪২০ জন এবং ২৮ হাজার ৬৫৩ জন ছাত্রী। আলিমে এবার ১১ হাজার ৫৮৮ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ২৮৬ এবং ছাত্র ৬ হাজার ৩০২। ফাজিলে ৪ হাজার ৭১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৬৩১ জন এবং ছাত্রী ২ হাজার ৮২ জন। সবমিলিয়ে মোট ৬০ হাজার ৩৭৪ জন পড়ুয়া পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ছাত্র ২৪ হাজার ৩৫৩ এবং ছাত্রী ৩৬ হাজার ২১ জন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)