প্রসেনজিত্ মালাকার: দৃষ্টিহীনতাকে হার মানিয়ে মাধ্যমিকে (Madhyamik) অসাধারণ সাফল্য বীরভূমের (Birbhum) দুই ছাত্রের। লাভপুর ব্লকের বাসিন্দা রঞ্জিত বাগদি ও রাহুল ওরাং—সিউড়ির শ্রী অরবিন্দ স্কুল ফর সাইটলেস-এর ছাত্র। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় দু’জনেই তুলে নিলেন ৫০০-র বেশি নম্বর। রঞ্জিত পেয়েছে ৫৩০, আর রাহুলের প্রাপ্ত নম্বর ৫১৫। তাঁদের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে এক অনন্য সহায়- বীরভূমের জেলা শাসক বিধান রায়।
বিগত ২৬ জানুয়ারি তিনি এই স্কুলের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ২৬ জন দৃষ্টিহীন ছাত্রকে উপহার দিয়েছিলেন অডিয়ো রেকর্ডার। সাধারণত ব্রেইলেই দৃষ্টিহীন ছাত্রদের পড়াশোনা হয়, তবে মাধ্যমিকের অনেক বই ব্রেইলে রূপান্তরিত না হওয়ায় অডিয়ো হয়ে ওঠে ভরসা। শিক্ষকরা প্রতিটি পাঠ্য ও রেফারেন্স বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অডিয়ো রেকর্ডারে রেকর্ড করে দেন। ছাত্ররা তা শুনেই প্রস্তুতি নেয়। এই দুই ছাত্র এখন শুধু জেলার গর্ব নয়, গোটা রাজ্যের কাছে দৃষ্টান্ত।
পরীক্ষার প্রথম দিন, জেলা প্রশাসনের আরও এক মানবিক দৃষ্টান্ত—সিউড়ির মহকুমা শাসক নিজে কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন এই দুই ছাত্রকে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দাস বলেন, “এই ফলাফল আমাদের গর্বিত করেছে। অডিয়ো পদ্ধতি যে কতটা কার্যকর হতে পারে, তা প্রমাণ করেছে রঞ্জিত আর রাহুল।” জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, মানুষের আসল শক্তি ইচ্ছাশক্তি। রঞ্জিত ও রাহুল প্রমাণ করলো, প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে দৃষ্টিহীনতাও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এদের সাফল্য শুধুমাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নয়, সমগ্র সমাজের অনুপ্রেরণা।”
অন্যদিকে, দারিদ্র্য জয় করে জেলার প্রথম, ডাক্তার হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় আক্রাম। দারিদ্র্য কখনও স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারে না-তার জীবন্ত প্রমাণ পূর্ব মেদিনীপুরের গিমাগেড়িয়া ওয়েলফেয়ার হাই মাদ্রাসার ছাত্র আক্রাম আলী খান। মধ্যমিকে হাই মাদ্রাসা বোর্ডে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে আক্রাম, ৭৪১ নম্বর পেয়ে সে জেলায় প্রথম হয়েছে। এই কৃতিত্বের পেছনে আছে অসীম পরিশ্রম, অদম্য মানসিকতা এবং এক দরিদ্র দিনমজুর বাবার আত্মত্যাগ।